মুঠোফোনে ছবি তোলা নিয়ে স্থানীয়দের মারধরে দুই শিক্ষার্থী আহত
Published: 11th, January 2025 GMT
মুঠোফোনে ছবি তোলা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার হামলায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নয়াবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত দুজন হলেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাশরাফি ও জোবায়েদ হাসান। বাঁশের লাঠির আঘাতে মাশরাফি মাথা ও কানে আঘাত পেয়েছেন। অন্যদিকে জোবায়েদ হাতে আঘাত পেয়েছেন। পরে দুজনকেই সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াবাজার পয়েন্টের পাশে ওয়াজ মাহফিল চলছিল। এ উপলক্ষে পাশের সড়কে বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী দোকানপাট বসেছিল। সেখানে ছবি তোলা নিয়ে স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে মাশরাফি ও জোবায়েদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় কয়েকজন মিলে ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর বাঁশ-লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। এতে তাঁরা আহত হন। এ সময় এক শিক্ষার্থীর মুঠোফোন ভেঙে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদুর রহমান বলেন, ‘এক সহপাঠীর জন্মদিন উদ্যাপন করে আমরা ১২ জন চা পানের জন্য নয়াবাজার এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে মাহফিল উপলক্ষে বিভিন্ন দোকান দেখে সেখানেও যাই। মাশরাফি মুঠোফোনে দোকানগুলোর বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও করছিল। হঠাৎ স্থানীয় কয়েকজন এসে দাবি করেন, মুঠোফোনে নারীর ছবি তোলা হয়েছে। এর একপর্যায়ে মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়ে সেটি ভেঙে ফেলেন। এ সময় মাশরাফিকে মারধর করলে অন্য সহপাঠীরা এগিয়ে গেলে আমাদের সবাইকে মারধর করেন স্থানীয় ১০ থেকে ১৫ জন। হামলাকারীরা আমাদের বাঁশ দিয়ে আঘাত করেন। আক্রমণকারীদের হাতে ছুরিও দেখা গেছে। এ ঘটনায় আমাদের দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁরা ছিনতাইয়ের জন্য আমাদের কয়েকজনের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তাঁদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।’
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মামলা করবে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মামলার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে।
অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জালালবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যেরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। শিক্ষার্থী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার পৌর এলাকার পাল্লাপাড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ আয়োজন করা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী লাঠি ও পাতা খেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল নাগরদোলা ও নৌকাদোল।
মেলা উপলক্ষে নতুন জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানানো হয় আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। বাড়িতে বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ধুম পড়ে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বেড়াতে আসেন মেয়েজামাই। তারা একসঙ্গে কেনাকেটা করেন। বাঁশ, মাটি ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতা। ছিল নারীদের প্রসাধনীর দোকানও।
এদিন অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টির দোকানগুলোয় ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করছেন দোকানি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তালের শাঁসসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। চটপটি, বারোভাজা ও ফুসকার দোকানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ মেলা ঘিরে আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু-কিশোরদের বাজানো বাঁশির শব্দ ছিল পুরো এলাকায়। মেলায় কথা হয় পাল্লাপাড়া গ্রামের জামাই মোরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছর আগে বিয়ে করেছেন এলাকায়। কয়েকদিন আগে ঈদের দাওয়াতে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি। এদিন আসেন জামাই মেলা উপলক্ষে।
মেলায় সকালে মাছ ও মাংসের দোকান বসে। বিকেলে ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই মানুষের ঢল নামে। শিশু-কিশোরদের হাত ধরে মেলায় ঘুরতে আসেন অভিভাবকসহ স্বজনরা। শিশুদের বায়না মেটাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককে।
আয়োজকদের অন্যতম সাবেক কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক বলেন, ৩৫ বছর থেকে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার জামাইদের দাওয়াত করা হয় বলে এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এ মেলা এখন এলাকার ঐতিহ্য।