Prothomalo:
2025-05-01@16:09:31 GMT

টাকার খোঁজে সরকার

Published: 12th, January 2025 GMT

বাজেটে টাকার জন্য মরিয়া হয়ে বিকল্প পথ খুঁজছে সরকার। এ জন্য শুল্ক-কর বাড়িয়ে সহজ পথে কর আদায়ের পথ বেছে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলো। ধনী-গরিবনির্বিশেষ বাড়তি ভ্যাট আদায় করে বাজেটের ঘাটতির জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়িয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। মুনাফার হার বাড়ালে সঞ্চয়পত্র কেনায় আরও আগ্রহী হবেন মানুষ। ব্যাংক খাতের দুর্বল পরিস্থিতির কারণে সেখান থেকে বাড়তি অর্থ ঋণ নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন দাতার কাছে চলতি অর্থবছরে ১৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেতে চায় সরকার। এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ অর্থ। সার্বিকভাবে অর্থের জোগান পেতে নানা পথে হাঁটছে সরকার; যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে সরকারের খরচ কমেনি, বরং বেড়েছে। গত কয়েক বছরে সরকারি বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ আগের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তুষ্ট রাখতে এ বছরের সংশোধিত বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানা গেছে।

বাজেটে টাকার প্রয়োজন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অনিশ্চয়তায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কম। শুল্ক-কর বাড়ানোর আইএমএফের শর্তের চাপ সামাল দিতে পারেনি সরকার।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ

অন্যদিকে সরকারের আয় তেমন একটা বাড়েনি। লক্ষ্য অনুসারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঘাটতি সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ পরিশোধ গতবারের তুলনায় অনেক বেড়েছে। দেশি ঋণও বেড়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বাজেটে টাকার প্রয়োজন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অনিশ্চয়তায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কম। শুল্ক-কর বাড়ানোর আইএমএফের শর্তের চাপ সামাল দিতে পারেনি সরকার।

তারপরও কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একদম সময়োপযোগী হয়নি বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। কর হার বাড়িয়ে আদায় বাড়বে কি না, সন্দেহ আছে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানো হচ্ছে মূলত টাকার জন্য। বিগত সরকার আমলাদের তোষণ করতে গিয়ে বাজেটে পরিচালন খরচ অনেক বাড়িয়ে ফেলেছে। এখন আর কমানোর সুযোগ নেই।

চলতি অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা হলো পরিচালন ব্যয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন–ভাতা, দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধেই সিংহভাগ অর্থ খরচ হয়। বাকিটা উন্নয়ন বাজেটের প্রকল্পে খরচ হয়।

এবার দেখা যাক, এই বাজেটের অর্থ আসবে কীভাবে। শুল্ক-কর (এনবিআর), শুল্ক-করবহির্ভূত রাজস্ব, বিদেশি সহায়তাসহ সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলন অনুসারে, বাকি ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আসবে দেশি-বিদেশি ঋণ থেকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ; সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেই সাধারণত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয় সরকার।

কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বাজেটের অর্থ জোগানে টান পড়ে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনসহ নানা অনিশ্চয়তায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে রাজস্ব আদায়ে। প্রতি মাসেই এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি বাড়তে থাকে। তাই শুল্ক-কর বাড়িয়ে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করছে সরকার। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়িয়েও ঋণ নিতে চায় সরকার। বাজেট সহায়তার মাধ্যমে বিদেশি সংস্থার কাছে ঋণ আরও বাড়ানো হচ্ছে।

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানো হচ্ছে মূলত টাকার জন্য। বিগত সরকার আমলাদের তোষণ করতে গিয়ে বাজেটে পরিচালন খরচ অনেক বাড়িয়ে ফেলেছে। এখন আর কমানোর সুযোগ নেই।আইএমএফের চাপ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এক শর বেশি পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলো। এর ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ভ্যাট বাড়ানোর ফলে ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবাইকে বাড়তি ভ্যাট দিতে হবে। মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কথা বলা ও ইন্টারনেটে খরচ বাড়বে। আবার পোশাকের দাম বাড়তে পারে। রেস্তোরাঁর খাবারের বিল বেশি আসবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে এ বছরের বাকি ৬ মাসে ১০-১২ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে। এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আছে টিস্যু পেপার, মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস, ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, সিগারেট ইত্যাদি।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের জন্য আইএমএফ শুল্ক-কর বৃদ্ধির শর্ত দিয়েছে। এ জন্য শুল্ক-কর বাড়ানো হয়।

চলতি অর্থবছরের এনবিআরকে ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা; যা পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা কম।

দেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিক্রি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বা ৩১ শতাংশ কমেছে। গত অক্টোবর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার ধারা অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে।সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা

সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বেশি ঋণ নিতে মুনাফার হার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী এ হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।

দেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিক্রি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বা ৩১ শতাংশ কমেছে। গত অক্টোবর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার ধারা অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে।

বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ দাতাদের কাছে ১৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেতে চায় সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে মাত্র ৬০ কোটি ডলার।বিদেশি ঋণ শোধ বেশি, প্রতিশ্রুতি নেই

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রতি মাসে যত বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছে, এর বেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে নিট বিদেশি ঋণপ্রাপ্তি নেতিবাচক। যদিও বাজেটে আলাদা বরাদ্দ থেকে অর্থাৎ খরচ খাত থেকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১৫৪ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ এসেছে। আর সরকারকে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৭১ কোটি ডলার।

রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় বাজেটে অর্থের জোগান বাড়াতে এবং রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিদেশি ঋণের ভরসা রাখতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ দাতাদের কাছে ১৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেতে চায় সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে মাত্র ৬০ কোটি ডলার।

এদিকে এডিপির প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি সংস্থা ও দেশের কাছে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতিও মিলছে না। জুলাই-নভেম্বরে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ১০ ভাগের ১ ভাগের সমান।

খরচ কমাতে যা করছে সরকার

মোটা দাগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, দেশ-বিদেশি ঋণ পরিশোধ খাতের বাজেটে বরাদ্দ কমানোর সুযোগ নেই। তাই অতীতের মতো উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ কমানোকেই প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার এডিপিতে বরাদ্দ কমতে পারে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু বিদেশি সহায়তাই কমবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন পরিস্থিতি বেশ খারাপ। গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার (১২ শতাংশ) গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

উন্নয়ন প্রকল্পে লাগাম টানা হলে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। বাজেটের অর্থ খরচ কম হলেও তা অর্থনীতিকে টেনে ধরে রাখবে। চার-পাঁচ মাস ধরে অর্থনীতি এমনিতেই শ্লথ। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির এত সংকোচন কোভিডের সময়ও হয়নি।

বাজেটের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বেশ কিছু পরামর্শ দেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, দাতাদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ বাজেট সহায়তা ছাড় করা উচিত। প্রকল্পের বিদেশি ঋণ দ্রুত ছাড় করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি অর্থের অপচয় ও অযথা খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন–ভাতাসহ পরিচালন খরচের খাত অন্তত দুই বছর বাড়তে না দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না

২০২৭ সালের জুন মাসের মধ্যে শুল্ক-কর সংক্রান্ত সব ধরনের কর অব্যাহতি যৌক্তিক হারে কমিয়ে আনতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এই লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। কর অব্যাহতি তুলে দেওয়ার ‘উচ্চ’ অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি অর্থবছরে এনবিআরকে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো করছাড় দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এই করছাড় না দিলে সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে আরও বেশি খরচ করতে পারত। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর আইন অনুসারে কিছু ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি থাকবে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেওয়া কর অব্যাহতি থাকবে না।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের অন্যতম শর্ত হলো করছাড় কমিয়ে আনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে।

এনবিআরের ওই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সিংহভাগ করছাড় পান সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণি ও সুবিধাপ্রাপ্ত শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। এতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) লোকসান হচ্ছে। করের ভার সমাজের সব শ্রেণির ওপর যৌক্তিকভাবে পড়ছে না। এসব কারণে করছাড় যৌক্তিক হারে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে এনবিআর।

যা করা হবে

কর অব্যাহতি কমানোর বিষয়ে আগামী দুই বছরে পাঁচ ধরনের কার্যক্রম নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এনবিআরের ওই পরিকল্পনায়। এক. খাতভিত্তিক করছাড় কত দেওয়া হয়, চিহ্নিত করা হবে। দুই. করছাড় পর্যালোচনা করে যৌক্তিক হারে কমিয়ে আনা। তিন. করছাড় কমাতে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। চার. করহার কার্যকর করার জন্য একটি মানসম্পন্ন পরিচালনা বিধান তৈরি করা। পাঁচ. পর্যায়ক্রমে ভ্যাটছাড় তুলে দেওয়া হবে।

এনবিআরের করনীতি, ভ্যাটনীতি ও কাস্টমস নীতি—এই তিন বিভাগ এসব কাজ করবে। ২০২৭ সালের প্রথমার্ধেই এসব কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা আছে।

কোন খাতে কত ছাড়

এনবিআর ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে তিনটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়—আয়কর, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক ও আবগারি শুল্ক মিলিয়ে এক অর্থবছরে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪১০ কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি করছাড় দেওয়া হয় ভ্যাট খাতে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। ওই অর্থবছরে এই খাতে এনবিআর আদায় করেছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সেবার যত ভ্যাট আদায় হয়েছে, তার প্রায় ৮২ শতাংশের মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড় না দিলে ভ্যাট খাতে এই অর্থবছরে আদায় হতো ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। মূলত অব্যাহতি কিংবা শুল্ক-করের হার কমিয়ে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের ছাড় দেওয়া হয়।

আয়কর খাতে আদায়ের চেয়ে ছাড়ের পরিমাণ বেশি। এনবিআরের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। ওই বছর আয়কর আদায় হয়েছিল ৮৭ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ যত আয়কর আদায় হয়েছিল, তার চেয়েও প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে। মূলত কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে এবং উৎসে করকে চূড়ান্ত কর দায় দিয়ে বিভিন্ন খাতকে আয়কর ছাড় দেওয়া হয়।

এনবিআরের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বাবদ ৩৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়।

গত পাঁচ দশকে ২০০-এর বেশি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিভিন্ন খাতকে করছাড় দেওয়া হয়েছে। এসব করছাড় তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বানাতে এনবিআরের একটি দল কাজ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আয় বেড়েছে ৩৫২ কোটি টাকা, তবু মুনাফা কমল ৯০ কোটি
  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • না’গঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের আড়াই কোটি টাকার অনুদান ও সঞ্চয়পত্র প্রদান 
  • জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের সাবেক ডিজির এনআইডি ব্লক
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ