বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। বলা হয়ে থাকে, এই ফলের প্রায় সবই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে কাঁঠালের বিচি অনেকের কাছেই উপাদেয়। এর পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা শরীরের শক্তি জোগায়, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, অন্ত্র ও পেশির সুস্থতায় সহায়ক। এ ছাড়াও এতে থাকা পর্যাপ্ত ম্যাগনেশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কয়েকজন উদ্যোক্তা কাঁঠালের বিচি সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন। একইসঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তাদের একজন কাঁচামাল ও মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী আইনুল হক। তার সঙ্গে রয়েছেন গাজী মাহমুদসহ  আটজন। দলবদ্ধভাবে তারা কাঁঠালের বিচির ব্যবসা করছেন। বিষয়টি এলাকায় অনেকের নজর কেড়েছে। 

জানা গেছে, প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম থেকে কাঁঠালের বিচি সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর উন্নত মানের বিচিগুলো আলাদা করে পুনরায় ধোয়া হয়। পরে রোদে শুকিয়ে বিচিগুলো বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হয়। নষ্ট ও অনুপযুক্ত বিচি আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে শ্রীপুর অঞ্চলে কাঁঠালের বিচির তেমন গুরুত্ব ছিল না। অনেকে বিভিন্নভাবে খেতেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই ফেলে দিতেন। বর্তমানে কাঁঠালের বিচির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় অনেকে আলাদা করে সংরক্ষণ করছেন এবং বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করছেন।

স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘‘আগে কাঁঠাল খেয়ে বিচিগুলো ফেলে দিতাম। এখন এগুলো বেচে প্রতিদিন কিছু না কিছু টাকা আয় করতে পারছি।’’

উদ্যোক্তা আইনুল হক বলেন, ‘‘আমরা আটজন মিলে ব্যবসা পরিচালনা করছি। গ্রাম থেকে বিচি সংগ্রহের জন্য কয়েকজন কর্মী রেখেছি। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন ধোয়া ও বাছাইয়ের কাজ চলে। একেকবারে চার থেকে পাঁচ টন বিচি জমলে তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে পাঠানো হয়।’’

ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিচিগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান গাজী মাহমুদ। প্রতি কেজি বিচি ১৭ থেকে ১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁঠালের মৌসুমজুড়ে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় টন বিচি সংগ্রহ করা হয়। মৌসুমের বাইরে এই চাহিদা কম থাকে, তখন সীমিত আকারে সরবরাহ করা হয় বলেও জানান তিনি। 

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘‘এটা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। কাঁঠালের বিচি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করার মাধ্যমে শুধু কর্মসংস্থান বাড়ছে না, একই সঙ্গে অপচয়ও রোধ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ আরও প্রসারিত করতে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’’

কাঁঠালের বিচি প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণে প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এ খাত আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁঠালের বিচি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি ভর্তা, ভাজি, তরকারি বা অন্যান্য রেসিপিতে ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও কাঁঠালের বিচির চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিলে এই খাত থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা/তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রক র য় জ ত স গ রহ জ ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা

তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে,  ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে,  একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫  পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং  গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খান
  • রাকিবের রঙিন মাছের খামার, মাসে আয় ৪৫ হাজার টাকা
  • যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়
  • বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
  • এক ছাতার নিচে ৪৮ ব্র্যান্ডের ফার্নিচার, ৫-১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়
  • ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
  • নবম-দশম শ্রেণির সাড়ে পাঁচ কোটি পাঠ্যবই ছাপাবে সরকার
  • গাজীপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১
  • কুষ্টিয়ায় দুই দিনে ১৪ কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ
  • পুতিন যুদ্ধ না থামালে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবেন ট্রাম্প