‘আধুনিক’কালে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালি কবিতাপ্রেমী জীবনানন্দে বেশ আটকে গেছেন অনেকখানি। তারপর বিনয় মজুমদার, উৎপল কুমার বসু, শামসুর রাহমানরা নতুন শাখা-উপশাখায় এগিয়েছেন। পাশাপাশি হাঁটছেন আরও আরও অনেকে। বাংলা কবিতার নিয়মিত পাঠক এসব জানেন। তারপরও পাঠের ক্ষুধা তাঁদের অন্বেষণে রাখে। ‘প্রকৃত কবিতা’ মেলেও কেবল কালেভদ্রে।

ঋষিণ দস্তিদার পাঠ করতে পেরে সে রকমই মনে হলো। জন্ম চট্টগ্রাম বলে তাঁকে কি ‘চট্টগ্রামের কবি’ বলব? তাহলে ‘ঢাকার পাঠকে’র জন্য সেটা বেশ লজ্জারই হয়। বোঝা যায়, আমাদের খোঁজখবরের দৌড় বড় বেশি মিডিয়া প্রভাবিত।

কবিতার কোনো রাজধানী নেই; কিন্তু বাংলা কাব্যজগৎ আগলে রেখেছে দুই রাজধানী—‘ঢাকা-কলকাতা’। ঋষিণ মজুমদারের কবিতা সেই দুই ‘রাজধানী’র বাইরের ভিন্ন এক প্রান্তর।

শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম কাব্যগ্রন্থের ব্যাক কাভারের ভেতরের ফ্ল্যাপে ঋষিণ দস্তিদারের পরিচয় হিসেবে ২৯টি শব্দ আছে। এর শেষ ছয়টি শব্দ এ রকম, ‘প্রকৃতিমনস্ক, অন্তর্মুখী, সমাজপ্রগতির ভাঙা–গড়ার যাত্রায় আস্থাশীল।’ দেখা হয়নি তাঁকে, তাঁর কোনো বন্ধুর কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণও পাইনি। নিইনি। কিন্তু ঋষিণের কবিতা অন্তর্মুখিনতার চূড়ান্ত। তাঁর কবিতা কাঠামোগতভাবেই চরম অন্তর্মুখী। পাঠককেও অন্তর্মুখিতায় ডুবিয়ে নেয়।

সংলাপধর্মী প্রতিটি কবিতায় দুটি সত্তা কথা বলে যায় কেবল। কোনো কবিতায় প্রচলিত অর্থে শিরোনাম নেই। শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম–এ এ রকম ৫০টি কথোপকথন আছে। কোনো কবিতাই এখানে কেবল পাঠ করে চলে যাওয়া যায় না। কেবল অস্পষ্ট ইমেজ ছুঁয়ে যায় কথোপকথনধর্মী কবিতাগুলো। এই ইমেজগুলো জীবনানন্দের মতো গ্রাম-প্রকৃতির নয়, উৎপল-শামসুর রাহমানদের নাগরিক আখ্যান-অস্থিরতার মতোও নয়; বরং একে বলা যায় কোনো এক মৃদু মানুষের চারপাশের অন্তর্মুখী অবলোকন। যে ‘মৃদু-মানুষ’ আমরা সবাই। ‘আমাদের’ শহুরে জীবনের টুকরো টুকরো হয়ে থাকাকে সার্জনের মতো চিরে চিরে দেখেন ঋষিণ। প্রাত্যহিক নাগরিকতার শুরু ও শেষহীন ইমেজগুলো তিনি সাজিয়েছেন তাঁর স্যানাটোরিয়ামে।

ঋষিণের কবিতায় বারবার হাসপাতালে আসে। তাঁর ‘হাসপাতাল’ মানে কারাখানাময় শহর। নগর। সেখানকার রোগ, ওষুধ, ওয়ার্ড বয়, নার্স, ট্রলি, লাশ, কফিন আর মানবজীবনের স্থায়ী এক অসহায়ত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কবিতার সংলাপ। মনে হয়, এ কবি আমাদের নিয়তির কণ্ঠস্বর। আমাদের পরিণতি। যে নিয়তি ও পরিণতিকে অতিক্রম করতে চাইছি প্রতিমুহূর্তে, প্রতিদিন। কিন্তু পারি না। শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম–এর ১৬ নম্বর কবিতা, সেটা এভাবে বলে—

‘যখন শিশুপার্ক, রেশনের দোকান ও কারখানার গল্প

বলেন.

..একধরনের সংকোচ, একটা বিভ্রম দেখি

আপনার চোখে, মুখের রেখায়...চেনা চেনা লাগে...

আমি জানি, বেড়ে ওঠার সময় তোমার অনেক ভয়

ছিল...আর বাড়িতে কোনো আয়না ছিল না...তার

সামনে দাঁড়ালে তুমি আমাকেই দেখতে পেতে...’

হ্যাঁ, আমরা, প্রজাতি হিসেবে মানুষ হয়তো পরস্পরের আয়না; সেই সূত্রেই ঋষিণের কবিতায় নাগরিক জীবনকে ‘খামারের ভেসে যাওয়া মাছগুলো’র মতো দেখায়।

এ কবিতা পাঠককে জানায়, অটোমেশনের যুগে মানুষের গন্তব্য হাসপাতাল বা অ্যাকুয়ারিয়ামে।

শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম

ঋষিণ দস্তিদার

প্রকাশক: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স;

প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪;

প্রচ্ছদ: হোয়াটএবাউট; ৬৪ পৃষ্ঠা;

দাম: ১৫০ টাকা।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে: prothoma.com এবং মানসম্মত বইয়ের দোকানে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আয়ারল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ আশরাফুল, টিম ডিরেক্টর রাজ্জাক

এ মাসেই বাংলাদেশের আসছে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দল। সেই সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুল। এই সিরিজে টিম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জাতীয় দলের আরেক সাবেক ক্রিকেটার বিসিবি পরিচালক ও নারী বিভাগের প্রধান আবদুর রাজ্জাক। আজ বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির প্রধান আমজাদ হোসেন।

মোহাম্মদ আশরাফুল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। এই মৌসুমেই প্রথমবারের মতো বরিশাল বিভাগের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর আগে রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং কোচ ছিলেন ২০০১ সালে কলম্বোয় বিশ্ব কাঁপিয়ে টেস্ট অভিষিক্ত হওয়া এই ব্যাটসম্যান।

আশরাফুল যুক্ত হলেও আগের কোচিং স্টাফের সদস্যরা দলের সঙ্গেই থাকছেন। এত দিন বাংলাদেশ দলে কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ ছিলেন না। সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন এই দায়িত্ব পালন করছিলেন।


বাংলাদেশ সফরে দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে আয়ারল্যান্ড। সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে ১১ নভেম্বর, ভেন্যু সিলেট। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ১৯ নভেম্বর। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ চট্টগ্রামে ২৭ ও ২৯ নভেম্বর। ২ ডিসেম্বর মিরপুরে শেষ ম্যাচ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ