অটোমেশনের কালে কবিতাপাঠের অভিজ্ঞতা
Published: 12th, January 2025 GMT
‘আধুনিক’কালে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালি কবিতাপ্রেমী জীবনানন্দে বেশ আটকে গেছেন অনেকখানি। তারপর বিনয় মজুমদার, উৎপল কুমার বসু, শামসুর রাহমানরা নতুন শাখা-উপশাখায় এগিয়েছেন। পাশাপাশি হাঁটছেন আরও আরও অনেকে। বাংলা কবিতার নিয়মিত পাঠক এসব জানেন। তারপরও পাঠের ক্ষুধা তাঁদের অন্বেষণে রাখে। ‘প্রকৃত কবিতা’ মেলেও কেবল কালেভদ্রে।
ঋষিণ দস্তিদার পাঠ করতে পেরে সে রকমই মনে হলো। জন্ম চট্টগ্রাম বলে তাঁকে কি ‘চট্টগ্রামের কবি’ বলব? তাহলে ‘ঢাকার পাঠকে’র জন্য সেটা বেশ লজ্জারই হয়। বোঝা যায়, আমাদের খোঁজখবরের দৌড় বড় বেশি মিডিয়া প্রভাবিত।
কবিতার কোনো রাজধানী নেই; কিন্তু বাংলা কাব্যজগৎ আগলে রেখেছে দুই রাজধানী—‘ঢাকা-কলকাতা’। ঋষিণ মজুমদারের কবিতা সেই দুই ‘রাজধানী’র বাইরের ভিন্ন এক প্রান্তর।
শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম কাব্যগ্রন্থের ব্যাক কাভারের ভেতরের ফ্ল্যাপে ঋষিণ দস্তিদারের পরিচয় হিসেবে ২৯টি শব্দ আছে। এর শেষ ছয়টি শব্দ এ রকম, ‘প্রকৃতিমনস্ক, অন্তর্মুখী, সমাজপ্রগতির ভাঙা–গড়ার যাত্রায় আস্থাশীল।’ দেখা হয়নি তাঁকে, তাঁর কোনো বন্ধুর কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণও পাইনি। নিইনি। কিন্তু ঋষিণের কবিতা অন্তর্মুখিনতার চূড়ান্ত। তাঁর কবিতা কাঠামোগতভাবেই চরম অন্তর্মুখী। পাঠককেও অন্তর্মুখিতায় ডুবিয়ে নেয়।
সংলাপধর্মী প্রতিটি কবিতায় দুটি সত্তা কথা বলে যায় কেবল। কোনো কবিতায় প্রচলিত অর্থে শিরোনাম নেই। শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম–এ এ রকম ৫০টি কথোপকথন আছে। কোনো কবিতাই এখানে কেবল পাঠ করে চলে যাওয়া যায় না। কেবল অস্পষ্ট ইমেজ ছুঁয়ে যায় কথোপকথনধর্মী কবিতাগুলো। এই ইমেজগুলো জীবনানন্দের মতো গ্রাম-প্রকৃতির নয়, উৎপল-শামসুর রাহমানদের নাগরিক আখ্যান-অস্থিরতার মতোও নয়; বরং একে বলা যায় কোনো এক মৃদু মানুষের চারপাশের অন্তর্মুখী অবলোকন। যে ‘মৃদু-মানুষ’ আমরা সবাই। ‘আমাদের’ শহুরে জীবনের টুকরো টুকরো হয়ে থাকাকে সার্জনের মতো চিরে চিরে দেখেন ঋষিণ। প্রাত্যহিক নাগরিকতার শুরু ও শেষহীন ইমেজগুলো তিনি সাজিয়েছেন তাঁর স্যানাটোরিয়ামে।
ঋষিণের কবিতায় বারবার হাসপাতালে আসে। তাঁর ‘হাসপাতাল’ মানে কারাখানাময় শহর। নগর। সেখানকার রোগ, ওষুধ, ওয়ার্ড বয়, নার্স, ট্রলি, লাশ, কফিন আর মানবজীবনের স্থায়ী এক অসহায়ত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কবিতার সংলাপ। মনে হয়, এ কবি আমাদের নিয়তির কণ্ঠস্বর। আমাদের পরিণতি। যে নিয়তি ও পরিণতিকে অতিক্রম করতে চাইছি প্রতিমুহূর্তে, প্রতিদিন। কিন্তু পারি না। শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম–এর ১৬ নম্বর কবিতা, সেটা এভাবে বলে—
‘যখন শিশুপার্ক, রেশনের দোকান ও কারখানার গল্প
বলেন.
আপনার চোখে, মুখের রেখায়...চেনা চেনা লাগে...
আমি জানি, বেড়ে ওঠার সময় তোমার অনেক ভয়
ছিল...আর বাড়িতে কোনো আয়না ছিল না...তার
সামনে দাঁড়ালে তুমি আমাকেই দেখতে পেতে...’
হ্যাঁ, আমরা, প্রজাতি হিসেবে মানুষ হয়তো পরস্পরের আয়না; সেই সূত্রেই ঋষিণের কবিতায় নাগরিক জীবনকে ‘খামারের ভেসে যাওয়া মাছগুলো’র মতো দেখায়।
এ কবিতা পাঠককে জানায়, অটোমেশনের যুগে মানুষের গন্তব্য হাসপাতাল বা অ্যাকুয়ারিয়ামে।
শতপুষ্প স্যানাটোরিয়াম
ঋষিণ দস্তিদার
প্রকাশক: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স;
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪;
প্রচ্ছদ: হোয়াটএবাউট; ৬৪ পৃষ্ঠা;
দাম: ১৫০ টাকা।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে: prothoma.com এবং মানসম্মত বইয়ের দোকানে
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক বিএনপি নেতা ও লঞ্চ যাত্রীদের পাল্টাপাল্টি হামলা, আহত ১০
বরিশালের হিজলায় লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের চাদর বিছানো নিয়ে বিরোধের জেরে সাবেক বিএনপি নেতা ও লঞ্চ যাত্রীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন। সোমবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার শৌলা লঞ্চঘাটে এই ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম খালেক মাঝি। তিনি হরিণাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
যাত্রী ও লঞ্চ কর্মচারীরা জানান, সোমবার সকাল ৮টায় মুলাদীর মৃধারহাট থেকে এমভি জানডা নামক একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। লঞ্চটি ৯টায় হিজলার শৌলা লঞ্চঘাটে ভেড়ে। এ স্টেশন থেকে ওঠা যাত্রীরা লঞ্চের ডেকে বসার চেষ্টা করেন। এ সময় ডেকে আগে বিছিয়ে রাখা চাদরে জায়গা পেতে যাত্রীপ্রতি এক হাজার টাকা দাবি করেন খালেক ও তাঁর সহযোগীরা। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে যাত্রীদের ওপর হামলা করা হয়। এতে ১০ জন যাত্রী আহত হন। তখন যাত্রীরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালেক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর পাল্টা হামলা করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে খালেক মাঝি বলেন, লঞ্চের মধ্যে গোলযোগ দেখে তিনি তা থামাতে গিয়েছিলেন। এ সময় লঞ্চের যাত্রীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক লঞ্চ কর্মচারী জানিয়েছেন, শৌলা লঞ্চঘাট খালেক মাঝিকে চাঁদা না দিলে সাধারণ যাত্রীরা ডেকে বসতে পারেন না। তারা খালেক মাঝির কাছে অনেকটা জিম্মি।