গ্রিনল্যান্ড নিজের থাবায় নিতে ট্রাম্পের তৎপরতাকে কী চোখে দেখছেন সেখানকার বাসিন্দারা
Published: 12th, January 2025 GMT
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও শান্ত থাকতে বলেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি মন্তব্য করে ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে বৈশ্বিক দ্বন্দ্বকে আবার তাতিয়ে তোলার পর তাঁর এ আহ্বান এল।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মঙ্গলবার বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য শুল্ক আরোপের কৌশল অথবা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে তিনি প্রস্তুত।
ট্রাম্পের মন্তব্যের জেরে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেদে বলেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের মালিক গ্রিনল্যান্ডবাসী।’
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড দখল করা ‘হয়ে উঠবে না’। অধিগ্রহণের বিষয়ে ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জার্মানি আর ফ্রান্সও।
এদিকে ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গত মঙ্গলবার অঞ্চলটিতে পা রেখেছেন। তিনি ৫৭ হাজার জনসংখ্যার ‘গ্রিনল্যান্ডকে আবারও মহিমাময় করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প দ্বীপটি নিয়ে এ বিতর্কের সূচনা করেছিলেন ২০১৯ সালে। তখন তিনি বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডের জন্য দর হাঁকার কথা ভাবছেন। বিষয়টিকে তিনি নিতান্তই ভূসম্পত্তি কেনাবেচা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
গ্রিনল্যান্ড ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ডেনমার্কের একটি উপনিবেশ ছিল। বর্তমানে এটি ডেনমার্কের অধীনে থাকা একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ২০০৯ সালে ভোটের মাধ্যমে দ্বীপটি স্বাধীনতা দাবি করার অধিকার অর্জন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী ডেনমার্ক অধিকৃত করলে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড দখল করেছিল। ১৯৪৫ সালে দ্বীপটি ডেনমার্কের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
ট্রাম্প এমন এক সময়ে গ্রিনল্যান্ড অধিকার বা অধিভুক্ত করার কথা বললেন, যখন ডেনমার্কের কাছ থেকে দ্বীপটির স্বাধীনতা অর্জন নিয়ে একটি বিতর্ক চলছে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেদে স্বাধীনতার পক্ষে। ২০১৯ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপে দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের প্রাপ্তবয়স্কদের ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতে কোনো না কোনো সময় ডেনমার্কের অধীনতা থেকে স্বাধীন হতে চান।
ট্রাম্পের দখলকামিতাকে গ্রিনল্যান্ডবাসী কী চোখে দেখছেন? গার্ডিয়ানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে মতামত জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিজ দলের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৩ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা