ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় মেলার নাম ‘কুম্ভমেলা’। ৪৫ দিনের এই মহাকুম্ভমেলা শুরু হবে আগামীকাল সোমবার। শেষ হবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি।

ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গমে স্নান করবেন কোটি মানুষ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্তত দুই লাখ পুণ্যার্থী অংশ নেবেন।

এবারের মেলাকে বলা হচ্ছে ‘মহাকুম্ভমেলা’। এই মহাকুম্ভমেলা ১২টি পূর্ণকুম্ভমেলা শেষে ১৪৪ বছর পার করার পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই মিলনস্থলে হাজির হয়েছেন লাখো মানুষ। আসছেন নাগা সন্ন্যাসী থেকে দেশ–বিদেশের সাধুসন্তরাও।

এই কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গম বা গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর মিলনস্থলে। আরও হয় হরিদ্বারের গঙ্গা নদী, নাসিকের গোদাবরী নদী আর উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীতে। এসব পুণ্য নদী। ২০১৯ সালে অর্ধকুম্ভমেলা হয়েছিল এই প্রয়াগরাজেই। সেবার ১২ কোটি পুণ্যার্থী সেখানে জড়ো হয়েছিলেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এবার প্রায় ৪০ কোটি মানুষ সেখানে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আর এই মেলাকে সামনে রেখে উত্তর প্রদেশ সরকার এই কুম্ভমেলাস্থলকে আলাদা ‘কুম্ভমেলা জেলা’ নামে একটি নতুন জেলা গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এবার এই মহাকুম্ভমেলা বসছে প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গমস্থলের কাছে চার হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে।

হিন্দুপুরাণমতে, দুর্বাসা মুনির অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সমুদ্রমন্থনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করে তুলে এনেছিল অমৃত কুম্ভ। সেই অমৃত যাঁরা পান করবেন, তাঁরা হয়ে যাবেন অমর। দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করার পর উঠে আসে অমৃত কুম্ভ। আর এই অমৃত কুম্ভ নেওয়ার জন্য লড়াই শুরু হয় দেবতা ও অসুরদের মধ্যে। এই লড়াইয়ের সময় অমৃতের কলস বা কুম্ভ নিয়ে দৌড়ানোর সময় চার ফোঁটা অমৃত পড়ে যায় প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গম, হরিদ্বারের গঙ্গা, নাসিকের গোদাবরী ও উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীতে। ফলে ওই চার স্থান হয়ে যায় পুণ্যভূমি। এই চার স্থানেই হয়ে থাকে কুম্ভমেলা। আর এই দেবতা-অসুরদের যুদ্ধ ১২ দিন চলেছিল বলে ১২ বছর পরপর হয়ে আসছে পূর্ণকুম্ভমেলা।

এবার প্রয়াগরাজে এই মহাকুম্ভমেলা আয়োজনের জন্য মোদি সরকার প্রথম পর্যায়ে ৭ হাজার কোটি রুপি দিয়েছে। উত্তর প্রদেশ সরকার দিয়েছে আরও ৭ হাজার কোটি রুপি। ২০১৯ সালে প্রয়াগরাজে অর্ধকুম্ভমেলায় খরচ হয়েছিল ৪ হাজার ২৩৬ কোটি রুপি।

মেলার মাঠে ভক্তদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার তাঁবু। থাকবে ১৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ২৫ হাজার ডাস্টবিন, হাসপাতাল, সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা, ওষুধের দোকান, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ ও চিকিৎসাকেন্দ্র। লাগানো হয়েছে ২ হাজার ৭৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। বানানো হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার শৌচালয়। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থাকছে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির পার্কিং লট।¯স্নানের জন্য নদীর ১২ কিলোমিটার তীরজুড়ে থাকছে ৩৫টি স্নানঘাট। নিরাপত্তা তদারকির জন্য থাকছে আকাশে ও জলের নিচে আধুনিক ড্রোনের নজরদারি। রাখা হচ্ছে ২৫টি ওয়াটার স্কুটার। ২০১টি রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। এই মেলায় থাকছে এআই প্রযুক্তির ব্যবহারও।

মহাকুম্ভমেলা উপলক্ষে ত্রিবেণি সঙ্গম এলাকায় বসানো হয়েছে নতুন নতুন মোবাইল টাওয়ার। আর এই ত্রিবেণি সঙ্গমকে সাজিয়ে তোলার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার কর্মী। বসানো হয়েছে ৬৯ হাজার এলইডি লাইট, ২ হাজার সোলার লাইট। নিয়মিত চলবে ১৩ হাজার ২৩৪টি ট্রেন। আরও চলবে ৩ হাজার ১৩৪টি স্পেশাল ট্রেন। ৭ হাজার সরকারি বাস। থাকবে হেলিকপ্টারে মহাকুম্ভ দর্শনের ব্যবস্থা। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ভক্তদের জন্য নানা মূল্যের তাঁবুর ব্যবস্থা। থাকছে বিনা মূল্যেরও বহু তাঁবু। এই ত্রিবেণি সঙ্গমে যাওয়ার জন্য গড়া হয়েছে অস্থায়ী ৩০টি সেতু। সঙ্গমস্থল ত্রিবেণি মোহনাকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ নৌযান রাখা হয়েছে।

কলকাতা থেকে ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ইসকন ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভক্তরা যোগ দিচ্ছেন এই মহাকুম্ভে। তাঁদের জন্য উত্তর প্রদেশ সরকার গড়েছে আলাদা তাঁবু। ভারত সেবাশ্রম সংঘ মেলায় বিরাট প্যাভিলিয়ন গড়েছে। এখানে দুই হাজার ভক্তের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রতিদিন। ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রয়াগরাজের দায়িত্বে থাকা একজন সন্ন্যাসী এ কথা জানিয়ে বলেছেন, প্রতিদিন তাঁরা দুই হাজার ভক্তকে খাওয়াবেন। থাকার ব্যবস্থা করবেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন, কলকাতার ভারত সেবাশ্রম সংঘের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে একটি চিঠি সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। ইসকন ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদও আলদাভাবে ভক্তদের থাকা ও খাবার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • গোলাম রাব্বানীর ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ