ভারতের এই মেলায় খরচ ৭ হাজার কোটি রুপি, ৪০ কোটি মানুষ অংশ নিতে পারেন
Published: 12th, January 2025 GMT
ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় মেলার নাম ‘কুম্ভমেলা’। ৪৫ দিনের এই মহাকুম্ভমেলা শুরু হবে আগামীকাল সোমবার। শেষ হবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি।
ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গমে স্নান করবেন কোটি মানুষ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্তত দুই লাখ পুণ্যার্থী অংশ নেবেন।
এবারের মেলাকে বলা হচ্ছে ‘মহাকুম্ভমেলা’। এই মহাকুম্ভমেলা ১২টি পূর্ণকুম্ভমেলা শেষে ১৪৪ বছর পার করার পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই মিলনস্থলে হাজির হয়েছেন লাখো মানুষ। আসছেন নাগা সন্ন্যাসী থেকে দেশ–বিদেশের সাধুসন্তরাও।
এই কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গম বা গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর মিলনস্থলে। আরও হয় হরিদ্বারের গঙ্গা নদী, নাসিকের গোদাবরী নদী আর উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীতে। এসব পুণ্য নদী। ২০১৯ সালে অর্ধকুম্ভমেলা হয়েছিল এই প্রয়াগরাজেই। সেবার ১২ কোটি পুণ্যার্থী সেখানে জড়ো হয়েছিলেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এবার প্রায় ৪০ কোটি মানুষ সেখানে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর এই মেলাকে সামনে রেখে উত্তর প্রদেশ সরকার এই কুম্ভমেলাস্থলকে আলাদা ‘কুম্ভমেলা জেলা’ নামে একটি নতুন জেলা গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এবার এই মহাকুম্ভমেলা বসছে প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গমস্থলের কাছে চার হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে।
হিন্দুপুরাণমতে, দুর্বাসা মুনির অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সমুদ্রমন্থনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করে তুলে এনেছিল অমৃত কুম্ভ। সেই অমৃত যাঁরা পান করবেন, তাঁরা হয়ে যাবেন অমর। দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করার পর উঠে আসে অমৃত কুম্ভ। আর এই অমৃত কুম্ভ নেওয়ার জন্য লড়াই শুরু হয় দেবতা ও অসুরদের মধ্যে। এই লড়াইয়ের সময় অমৃতের কলস বা কুম্ভ নিয়ে দৌড়ানোর সময় চার ফোঁটা অমৃত পড়ে যায় প্রয়াগরাজের ত্রিবেণি সঙ্গম, হরিদ্বারের গঙ্গা, নাসিকের গোদাবরী ও উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীতে। ফলে ওই চার স্থান হয়ে যায় পুণ্যভূমি। এই চার স্থানেই হয়ে থাকে কুম্ভমেলা। আর এই দেবতা-অসুরদের যুদ্ধ ১২ দিন চলেছিল বলে ১২ বছর পরপর হয়ে আসছে পূর্ণকুম্ভমেলা।
এবার প্রয়াগরাজে এই মহাকুম্ভমেলা আয়োজনের জন্য মোদি সরকার প্রথম পর্যায়ে ৭ হাজার কোটি রুপি দিয়েছে। উত্তর প্রদেশ সরকার দিয়েছে আরও ৭ হাজার কোটি রুপি। ২০১৯ সালে প্রয়াগরাজে অর্ধকুম্ভমেলায় খরচ হয়েছিল ৪ হাজার ২৩৬ কোটি রুপি।
মেলার মাঠে ভক্তদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার তাঁবু। থাকবে ১৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ২৫ হাজার ডাস্টবিন, হাসপাতাল, সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা, ওষুধের দোকান, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ ও চিকিৎসাকেন্দ্র। লাগানো হয়েছে ২ হাজার ৭৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। বানানো হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার শৌচালয়। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থাকছে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির পার্কিং লট।¯স্নানের জন্য নদীর ১২ কিলোমিটার তীরজুড়ে থাকছে ৩৫টি স্নানঘাট। নিরাপত্তা তদারকির জন্য থাকছে আকাশে ও জলের নিচে আধুনিক ড্রোনের নজরদারি। রাখা হচ্ছে ২৫টি ওয়াটার স্কুটার। ২০১টি রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। এই মেলায় থাকছে এআই প্রযুক্তির ব্যবহারও।
মহাকুম্ভমেলা উপলক্ষে ত্রিবেণি সঙ্গম এলাকায় বসানো হয়েছে নতুন নতুন মোবাইল টাওয়ার। আর এই ত্রিবেণি সঙ্গমকে সাজিয়ে তোলার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার কর্মী। বসানো হয়েছে ৬৯ হাজার এলইডি লাইট, ২ হাজার সোলার লাইট। নিয়মিত চলবে ১৩ হাজার ২৩৪টি ট্রেন। আরও চলবে ৩ হাজার ১৩৪টি স্পেশাল ট্রেন। ৭ হাজার সরকারি বাস। থাকবে হেলিকপ্টারে মহাকুম্ভ দর্শনের ব্যবস্থা। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ভক্তদের জন্য নানা মূল্যের তাঁবুর ব্যবস্থা। থাকছে বিনা মূল্যেরও বহু তাঁবু। এই ত্রিবেণি সঙ্গমে যাওয়ার জন্য গড়া হয়েছে অস্থায়ী ৩০টি সেতু। সঙ্গমস্থল ত্রিবেণি মোহনাকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ নৌযান রাখা হয়েছে।
কলকাতা থেকে ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ইসকন ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভক্তরা যোগ দিচ্ছেন এই মহাকুম্ভে। তাঁদের জন্য উত্তর প্রদেশ সরকার গড়েছে আলাদা তাঁবু। ভারত সেবাশ্রম সংঘ মেলায় বিরাট প্যাভিলিয়ন গড়েছে। এখানে দুই হাজার ভক্তের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রতিদিন। ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রয়াগরাজের দায়িত্বে থাকা একজন সন্ন্যাসী এ কথা জানিয়ে বলেছেন, প্রতিদিন তাঁরা দুই হাজার ভক্তকে খাওয়াবেন। থাকার ব্যবস্থা করবেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন, কলকাতার ভারত সেবাশ্রম সংঘের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে একটি চিঠি সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। ইসকন ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদও আলদাভাবে ভক্তদের থাকা ও খাবার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ
রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।