আর্সেনিকের অসনীয় মাত্রা সাড়ে ২৬ হাজার নলকূপে
Published: 13th, January 2025 GMT
শরীয়তপুর জেলার প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এসব নলকূপের পানি পরীক্ষা করে আর্সেনিকের এই অসহনীয় মাত্রা পেয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এসব নলকূপের পানি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব নলকূপে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম হলেও শরীয়তপুরের এই নলকূপগুলোর পানিতে প্রতি লিটারে শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রাম আর্সেনিকের মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৬০ দশকে প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম। এরপর ১৯৯৩ সালে তা দশমিক শূন্য ১ মিলিগ্রামে কমিয়ে আনা হয়; কিন্তু বাংলাদেশ ১৯৬৩ সালের সেই মাত্রা আর পরিবর্তন করেনি।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানিতে সহনীয় মাত্রায় আর্সেনিক থাকে। সেই মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক আছে এমন পানি পান করলে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এতে মানুষের ত্বকের ক্ষতি হয়। তা ছাড়া ওই পানি নিয়মিত পান করলে লিভার, ফুসফুস ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন ওই পানি পান করলে ক্যানসারে আক্রান্তের ঝুঁকিও থাকে। গ্রামপর্যায়ে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা অসনীয় মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে, এমন নলকূপের পানি পান না করার ব্যাপারে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
শরীয়তপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৬৩টি নলকূপ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের’ আওতায় ২০২২–২৩ অর্থবছরে শরীয়তপুরের ৬৪টি ইউনিয়নের এসব নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হয়। ১ হাজার ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই পরীক্ষার কাজ করেন । তাঁরা ২৬ হাজার ৪২৯টি অগভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা করে আর্সেনিকের অসহনীয় মাত্রা পান। এরপর তাঁরা ওই নলকূপগুলো লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছেন।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের আড়িগাঁও এলাকার মোতালেব মিয়ার বাড়ির অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। ওই নলকূপও লাল রং করে দেওয়া হয়েছে।
মোতালেব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়িতে আর কোনো নলকূপ নেই। নলকূপের পানি পরীক্ষা করার পর মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে বলে জানা যায়। এরপর থেকে আমরা ওই পানি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। গ্রামের আরেকটি বাড়ির গভীর নলকূপ থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করি।’
শরীয়তপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসহনীয় মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে এমন নলকূপের পানি পান করা যাবে না। তবে ওই পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। যেসব নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে, সেগুলো আমাদের তদারকিতে আছে। ওই নলকূপগুলো অকেজো বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পটুয়াখালীতে সৎমা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা
পটুয়াখালীতে কুলসুম বেগম ও মোসা. সাহিদা বেগম নামের দুই নারীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক তরুণের বিরুদ্ধে। আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চারাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আল আমিন (২৭) সম্পর্কে নিহত সাহিদা বেগমের সৎছেলে এবং বৃদ্ধা কুলসুম বেগমের নাতি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত দুই নারীর স্বজন মো. আশ্রাফ খাঁ জানান, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে অস্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। এরপর তাঁর পরিবার তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরে আল আমিনের বাবা রাজ্জাক খাঁ পাশের একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলে আল আমিন দা দিয়ে গলা কেটে তাঁর সৎমা সাহিদা বেগম ও বৃদ্ধ দাদি কুলসুম বেগমকে হত্যা করেন।
বাহাদুর আলম খাঁ (৫০) নামের এক আত্মীয় বলেন, নিহত সাহিদা সম্পর্কে তাঁর চাচিশাশুড়ি এবং কুলসুম বেগম দাদিশাশুড়ি। দুপুরে বাড়ির সবাই জুমার নামাজ পড়তে গেলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছোট ছেলে আল আমিন রান্নার কাজে ব্যবহৃত ধারালো দা দিয়ে প্রথমে সৎমা এবং পরে দাদিকে গলা কেটে হত্যা করেন। তিনি বলেন, আল আমিন মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর তিন বছর আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে যান। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক দেখালেও সুস্থ হননি।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, দুই নারীকে হত্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ড ঘটানো ব্যক্তি ওই পরিবারের সদস্য। ঘটনার পর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে উদ্ধার করে পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে। জড়িত তরুণ এখন পলাতক। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কি না, তদন্ত করে দেখা হবে।