বিএনপি ক্ষমতায় যাবে না, কে যাবে: হারুনুরের প্রশ্ন
Published: 14th, January 2025 GMT
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ বলেছেন, অনেকেই বলেন, নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আমার প্রশ্ন, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে না, কে যাবে?’’
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার হলে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, তা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে বিএনপি। এদেশের জনগণ যখনই সুযোগ পেয়েছেন, ভোট দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। আবারো দেশের জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবেন।’’
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এক সমাবেশে তিনি এ প্রশ্ন করেন।
আরো পড়ুন:
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘অনেকটা বেটার’: ফখরুল
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের একমাত্র দাবি ছিল, শেখ হাসিনার পতন। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। তাদের আমরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ডানা মেলে ধরা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্য থেকেও সুনির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ বলা হচ্ছে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রর বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যারা ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। যারা বাংলাদেশ থেকে লুটপাট করেছে, তাদের বিচার চলছে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত যে সরকার আসবে, তারাও তাদের বিচার করবে। তাই, এই বিচার-কার্যক্রম নিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই।’’
তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে এবং কৃষকদলের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নাঈমের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী।
বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মো.
ঢাকা/নাজমুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির প্রতিটি কাজে জবাবদিহি থাকতে হবে
সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণা না হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সম্পাদনে সচেষ্ট আছে। তারা ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত করেছে এবং ১০ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসন বণ্টনের কাজটি খুবই জরুরি। প্রতিটি নির্বাচনের আগে কমিশন আসনের বিষয়ে জনগণের মতামত নিয়ে থাকে; এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষায়িত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইসি গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো ও বাগেরহাটে একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ও গাজীপুরে পাঁচটি আসন রয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বাগেরহাটে সংসদীয় আসন একটি কমে হবে তিনটি। আর গাজীপুরে একটি বেড়ে হবে ছয়টি সংসদীয় আসন। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়। সংসদীয় আসনগুলোর সীমানার খসড়া নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আপত্তি কিংবা দাবির শুনানি শেষে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে।
জনশুমারি-২০২২ অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে বিশেষ কারিগরি কমিটি শুমারিতে বেশ কিছু অসামঞ্জস্য পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ ভোটার তালিকা রয়েছে। ওই তালিকার মোট ভোটারের ভিত্তিতেই ২০ হাজার ৫০০ কমবেশি গড় ভিত্তিতে গ্রেডিং তৈরি করে কোন জেলায় বেশি ভোটার, কোথায় কম, তা পর্যালোচনা করা হয়। এক থেকে তিন আসনবিশিষ্ট জেলাগুলোকে আসন বাড়ানো-কমানোর ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়, সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের মতো আবেদন কমিশন পেয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি আসনে ছোট-বড় সংশোধন, সমন্বয়ের প্রস্তাব কারিগরি কমিটি করেছে।
গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, বিশেষায়িত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনো জেলার মোট ভোটার ও জনসংখ্যা বিশ্লেষণ করে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের ৩৯ থেকে ৪২টি আসনের সীমানায় ছোটখাটো পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আড়াই শতাধিক আসনের সীমানা বহাল থাকছে। সে ক্ষেত্রে আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজটি চূড়ান্ত করতে ইসিকে খুব বেগ পেতে হবে না।
অন্যদিকে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রগুলোকেও প্রস্তুত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, কোনো কেন্দ্রের অবকাঠামো মেরামত বা সংস্কার করতে হলেও যেন তারা দ্রুততম সময়ে করে। সাধারণত সরকারি স্থাপনা মেরামতের কাজটি করে থাকে গণপূর্ত বিভাগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কারের কাজ করে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রবাসীরা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসীরা বহু বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন তাঁদের সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনগুলোতে নাম নিবন্ধনের অনুরোধ করেছে। দূরবর্তী স্থান থেকে সরাসরি নিবন্ধন করতে অনেকে আগ্রহী হবেন না। সে ক্ষেত্রে অনলাইনেও নিবন্ধনের সুযোগ রাখতে হবে। ইতিমধ্যে কিছু প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন। নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষিত হলে তাঁদের আগ্রহ বাড়বে আশা করা যায়।
নির্বাচন কমিশনের এসব উদ্যোগ ইতিবাচক বলে আমরা মনে করি। কিন্তু তাদের মূল যে দায়িত্ব জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সেটা কতটা সুচারুভাবে করতে পারে, তার ওপরই সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করবে। ইসিকে মনে রাখতে হবে, নাগরিকেরা ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন, যাঁরা বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি কাজ ও পদক্ষেপে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত।