কুষ্টিয়ায় তালা ভেঙে ইউপি চেয়ারম্যানকে কার্যালয়ে এনে বসালেন একদল নারী
Published: 14th, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কক্ষ টানা ৮ দিন বন্ধ থাকার পর তালা ভেঙে ফেলেছেন একদল নারী। তাঁরা মিছিল নিয়ে তাঁকে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে নির্ধারিত চেয়ারে বসিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীদের দাবি, বিভিন্ন সেবা গ্রহণে ভোগান্তিতে পড়ে তাঁরা এটি করতে বাধ্য হয়েছেন।
ওই চেয়ারম্যানের নাম মিজানুর রহমান। তিনি যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক।
৪ জানুয়ারি রাতে ইউপি চত্বরে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের অভিযোগ এনে ওই রাতেই চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দেন যদুবয়রা ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরদিন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সচিব, গ্রাম পুলিশ ও সেবাপ্রত্যাশীদের বের করে দেন স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পরিষদ ভবনের প্রধান ফটকেও তালা লাগিয়ে দেন। ৬ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় প্রধান ফটক থেকে তালা খুলে নেওয়া হয়। তবে গতকালের আগপর্যন্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝোলানো ছিল। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।
যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ জানান, নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্মদিন উদ্যাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, আওয়ামী লীগের দোসর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুরকে অপসারণের দাবিতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করায় কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তালা ভেঙে ফেলা নারীদের মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন ভাতাভোগী ও এই সেবাপ্রত্যাশী এবং চেয়ারম্যানের দলীয় ভক্ত। বিষয়টি নিয়ে এলাকাটিতে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের শাস্তিও দাবি করেছে। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানও তাঁর কার্যালয়ে তালা লাগানোর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
কয়েকজন নারী জানান, মিথ্যা দোষে একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দিয়েছিল। এ জন্য চেয়ারম্যান পথেঘাটে, বারান্দায় বসে কাজ করছিলেন। অনেকে পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন। এতে চরম জনদুর্ভোগ হচ্ছিল। এ জন্য হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয়ের তালা ভেঙে তাঁরা চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে পরিষদে ডেকে আনা হয়।
চেয়ারম্যানের কক্ষের তালা ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, পরিষদে চেয়ারম্যান তাঁর কক্ষে বসেছেন। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে এমনটা কথা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসনের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্র করে কে বা কারা ছুটির রাতে পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের কেক কেটেছিলেন, এ জন্য বিএনপির লোকজন কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিলেন। এতে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছিল। তাই সোমবার শতাধিক নারী সেবাপ্রত্যাশী তালা ভেঙে তাঁকে পরিষদে নিয়ে এসেছেন।।
ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ। অন্যদিকে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ভবনে তালা লাগানো ও ভাঙা—দুটিই অবৈধ। যেহেতু একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ এসেছে, সেটির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত দুটি অভিযোগই পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় কিছু করা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।