গতবারের চেয়ে এডিপিতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ
Published: 14th, January 2025 GMT
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময়ে এডিপির মাত্র ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। শুধু বাস্তবায়নের হারই নয়, টাকা খরচের দিক থেকেও জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অর্থ খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা কম।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ক্ষমতার পটপরিবর্তন, ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়া ও সরকারের অর্থ ছাড়ে কড়াকড়ি—এসব কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে কম টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া নতুন প্রকল্প পাসের ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নিয়েছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মোট ৫০ হাজার ২ কোটি টাকা কম খরচ করতে পেরেছে। এই খরচ এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে খরচ হয়েছিল ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। তারও আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বরে ৬০ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নের হার খুবই কম। সে জন্য আগের অর্থবছরের মতো এবারও এডিপির আকার কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, এবার সংশোধিত এডিপির আকার ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে। আগামী মাসে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করা হবে।
১৯ মন্ত্রণালয় ১০ শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনিচলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থের ১০ শতাংশও খরচ করতে পারেনি। এ সময়ে সব মিলিয়ে ১০ শতাংশের কম অর্থ খরচ করেছে, এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, সেতু বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় (থোক বরাদ্দসহ), স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্পগুলোয়। এ বিভাগের অনুকূলে ২৩১টি প্রকল্পে ৩৭ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। জুলাই-ডিসেম্বরে তারা খরচ করেছে ৯ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।
এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’
আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’