দাম বাড়াতে সারে কৃত্রিম সংকট, ভোগান্তি
Published: 16th, January 2025 GMT
সপ্তাহখানেকের মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকরা বোরো আবাদে নামবেন। এরই মধ্যে কিছু গ্রামের দু-চারজন কৃষক আবাদ শুরু করেছেন। এ সময়টাতেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এতে আবাদ খরচ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন কৃষক।
তবে বিসিআইসি ও বিএডিসির সার ডিলাররা বলছেন বরাদ্দ কম। এ জন্য কোনো কোনো সার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার।
জানা গেছে, উপজেলায় বিএডিসির ২৩ ও বিসিআইসির ১৩ জন ডিলার আছেন। এর মধ্যে সার তুলেছেন সাত থেকে আটজন। ডিসেম্বর মাসে এ উপজেলায় টিএসপি ৩০৪ টন, ইউরিয়া ৬৫৬ টন ও এমওপি ৩৭৭ টন এবং জানুয়ারি মাসে টিএসপি ২৯১ টন, ইউরিয়া ১ হাজার ২৮৪ টন ও এমওপি ৩৯৩ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খুচরা বাজারে প্রতি বস্তা টিএসপি ১ হাজার ৩৫০ টাকা, এমওপি ১ হাজার টাকা ও ইউরিয়া ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা টিএসপি ১ হাজার ৫৪০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, এমওপি ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ ও ইউরিয়া সার ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
দলগাছা গ্রামের মোকলেছার রহমান বকুল বলেন, মৌসুম শুরু থেকেই সারের দাম বেশি। আবার চাহিদামতো পাওয়াও যাচ্ছে না। দোকানদার সার নেই বলছেন। কিন্তু বেশি টাকা দিলেই সার মিলছে।
সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে শিমলা বাজারের বিএডিসির ডিলার মোফাজ্জল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রণবাঘা বাজারের বিসিআইসির ডিলার রাজীব প্রসাদ বলেন, বোরো মৌসুমে টিএসপি ও এমওপি সারের চাহিদা বেশি। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ১৩৩ বস্তা। এই সার দিয়ে পুরো উপজেলার কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে সবাই সার পান না।
কুন্দারহাটের সার ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ বলেন, দেশের ডিলার ব্যবস্থাপনা ভালো না। সব জায়গায় তারা বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। চাহিদামতো সার এ উপজেলায় নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। আগেও সারের দাম বেশি নেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আবারও অভিযান চালানো হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউর য় ব যবস উপজ ল ট এসপ
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।