একশর বেশি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত অভিহিত করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, সিদ্ধান্তটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে, চাপ বাড়বে। এটা দেশের জনগণের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজস্ব সংগ্রহের জন্য অন্য উপায় বিবেচনা করার এবং সে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিন।

গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের এই নতুন করারোপের ফলে সাধারণ মানুষের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর ফলে বর্তমানে প্রায় ১৩ শতাংশ ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পাবে, পরিবারের সঞ্চয় কমবে এবং ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হারও বাড়বে। বর্তমানে নিম্নমুখী ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আছে, তা আরও কমবে। কর্মসংস্থান আরও কমে যাবে, বৃদ্ধি পাবে বেকারত্বের সংখ্যা।

শুধু তাই নয়, উচ্চমূল্যে জ্বালানি খরচ আরও বাড়বে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়বে, ব্যবসায়িক ব্যয় এবং শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা আরও হ্রাস পাবে, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনধারণ আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। ব্যবসায়ে বিনিয়োগ কমবে, রপ্তানি প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস পাবে। সর্বোপরি অর্থনীতি ও দেশের জনগণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র বিবেচনায় এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, নতুন করে ভ্যাট আরোপে স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্দশা চরমভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এই ভঙ্গুর অবস্থায় সহজ রাস্তায় হেঁটে ভ্যাটের হার তথা কর বাড়িয়ে সরকারের খরচ মেটানোর চেষ্টা করলে তা দেশের জনগণের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না।

খরচ কমানোর তাগিদ
সরকারকে খরচ কমানোর তাগিদ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার তার উন্নয়ন বাজেট পুনর্বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় ও আর্থিকভাবে অযৌক্তিক প্রকল্পগুলো বাদ দিলে প্রায় ২০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব এবং এতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে। পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার যদি স্থানীয় সরকারের বাজেট ও ভর্তুকি খাতে খরচ কমায় এবং সার্বিকভাবে পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশ কমাতে পারে, তাহলে ন্যূনতম ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব। খরচ কমানোর মাধ্যমে বাজেটের ন্যূনতম ১ লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারে এবং ঘাটতি কমাতে পারে।

সরকারের সমন্বয়হীনতার অভাব
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ডিসেম্বরে মানুষের আয় বেড়েছে ৮ ভাগ, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ১১ ভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ১৪ আগস্ট আশ্বাস দিয়েছিলেন, ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সহনীয় হবে। কিন্তু বাস্তবে তা বরং বেড়েছে। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তার সুফল পেয়েছে। বাংলাদেশ যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি, বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। গোষ্ঠী স্বার্থ উপেক্ষা করতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমাতে, অন্যদিকে সরকার কর বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। এই অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।

মেগা প্রকল্পে আপাতত অর্থ বরাদ্দ বন্ধ রাখুন
মির্জা ফখরুল বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত মেগা প্রজেক্টের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ আপাতত বন্ধ রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। পতিত সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বর্তমান বাজেটে বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার পরিমাণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নিজেদের স্বার্থে বছরের পর বছর এগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

শ্বেতপত্র কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশই লুটপাট করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটের এমন অনেক খাত রয়েছে, যেমন অবকাঠামো খাতগুলোতে বরাদ্দকৃত বাজেটের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় করা সম্ভব হয় না।

সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম উচিত ছিল আওয়ামী লুটপাটের বাজেট বাদ দিয়ে একটা অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট ঘোষণা করা। কিন্তু সেটা না করে ওই লুটপাটের বাজেট বাস্তবায়ন করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটা খুব কঠিন কাজ।

মহাসচিব বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় আওয়ামী সরকারের ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘাটতি মোকাবিলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার একদিকে খরচ কমিয়ে এবং অন্যদিকে আয় বাড়িয়ে, বর্তমান বাজেট ঘাটতির কিছুটা হলেও সমাধান করতে পারে এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ পদক ষ প সরক র র র জন য ব যবস ফখর ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করছে জার্মানির একটি স্টেট, কেন

সরকারি কার্যালয়ে মাইক্রোসফটের টিমসসহ বেশ কয়েকটি সফটওয়্যারের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেট। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আগামী তিন মাস পর পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করতে পারবেন না। তথ্য সংরক্ষণে বিদেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

স্টেট গভর্নমেন্টের ডিজিটাল রূপান্তরবিষয়ক মন্ত্রী ডির্ক শ্রোয়েডটার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাই। এ জন্যই মাইক্রোসফট টিমসের ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছি।’ নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় প্রাথমিকভাবে শেলসভিগ-হোলস্টেইন স্টেটের ৬০ হাজার সরকারি কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী এই পরিবর্তনের আওতায় আসবেন। পরবর্তী ধাপে আরও প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষককে একই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্টেট গভর্নমেন্ট ২০২৪ সাল থেকেই ধাপে ধাপে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহারের বিকল্প খুঁজে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে অফিস ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও এক্সেলের পরিবর্তে ‘লিব্রে অফিস’ এবং ই–মেইল ও ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাপনায় ‘মাইক্রোসফট আউটলুক’–এর জায়গায় ‘ওপেন-এক্সচেঞ্জ’ ব্যবহার শুরু হয়েছে।

পরবর্তী ধাপে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাদ দিয়ে একটি লিনাক্সভিত্তিক বিকল্প চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ডির্ক শ্রোয়েডটার জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে জ্বালানিনির্ভরতা নিয়ে যেমন সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তেমনি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘এই যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা শুধু জ্বালানিতেই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতেও কতটা নির্ভরশীল। এখন সময় এসেছে এসব নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার।’ স্টেট গভর্নমেন্ট জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো ক্লাউড সেবার বদলে জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ক্লাউড প্ল্যাটফর্মেই তারা সরকারি তথ্য সংরক্ষণ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। বিশেষত মাইক্রোসফটের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি প্রতিযোগিতাবিষয়ক তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ ছিল, মাইক্রোসফট তাদের ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে টিমস সফটওয়্যার বান্ডিল করে বিক্রি করে, যা বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমিয়ে দেয়। ডির্ক শ্রোয়েডটার বলেন, ‘শেলসভিগ-হোলস্টেইনের নেওয়া এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ