দীপ শিখা নামে একটি সমিতিতে দীর্ঘ ১৫ বছর মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন মরিয়ম বেগম। এই সমিতিতে তার কাজ ছিল সমিতি থেকে লোন নেওয়া গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তির টাকা উত্তোলণ করা। দীর্ঘ ১৫ বছরে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে কিছু মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়।

সেই সুবাদে নিজেদের কল্যাণের লক্ষে ১২ জন ব্যক্তি মিলে বছরের দুই ঈদকে লক্ষ রেখে ঈদ বাজারের জন্য একটি সঞ্চয় প্রকল্প গড়ে তোলেন। উদ্দেশ্য ঈদে পরিবার নিয়ে যেন সকল সদস্য ভালো খাবার এবং নতুন কাপড় কিনতে পারেন। তবে এই সিদ্ধান্তই যে মরিয়মের জন্য কাল হয়ে দাড়াবে, সেটা কল্পনাতেও ছিলনা তার।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন আদমজী বিহারী ক্যাম্প এলাকায় দীপ শিখা এই সমিতি খুলে বসেছেন মোসাঃ লিপি আক্তার ও তার স্বামী ফরিদ আহমেদ। যার কোন নিবন্ধন নেই। এই সমিতিতে চাকুরী করতেন মরিয়ম বেগম। বর্তমানে মরিয়মকে চাকুরীচ্যুত করে তার জায়গায় লিপি আক্তারের আপন বোন শিল্পি আক্তারকে নিয়োগ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মরিয়ম বেগমের অভিযোগ, আমি দীর্ঘ সময় এই সমিতিতে কাজ করার সুবাদে মালিক পক্ষের অনেক গোপন তথ্য জেনে গেছি। তাদের গোপন কথা কাউকে ফাঁস করে দিতে পারি সেই ভয়েই তারা আমাকে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে চাকুরীচ্যুত করেছে। আমাকে তারা ছয় মাসের বেতনও পরিশোধ করেনি। 

শুধু তা-ই নয়, তারা আমার কাছে টাকা পাওনা দাবি করে আমার ঘর দখল করে নিয়েছে। এছাড়া আমাকে আটকে রেখে মারধর করে, এলাকার বখাটে ছেলে এবং পুলিশের মাধ্যমে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। এ ঘটনায় আমি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে কারও কাছে ন্যায় বিচার পাইনি।

এরপর ন্যায় বিচার পাওয়ার আবেদন জানিয়ে ভুক্তভোগী মরিয়ম বেগম বিভিন্ন সময়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, র‌্যাব-১১, সেনাবাহিনী ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

এসব অভিযোগে মরিয়ম বেগম উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত দীপ শিখা নামে নিবন্ধহীন ঐ সমিতির মালিক লিপি আক্তার, তার স্বামী ফরিদ আহমেদ ও বোন শিল্পি আক্তার আমার ছয় মাসের বেতন আটকে রেখেছে। বেতন চাইলে নানা তালবাহানা করে। এছাড়া আমার মাধ্যমে সমিতিতে গ্রাহকদের জমানো টাকাও ফেরত দিচ্ছে না তারা। 

তাদের কাছে আমি টাকা চাইতে গেলে তারা উল্টো আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে বখাটে ছেলেদের দিয়ে ধরে নিয়ে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করে এবং আমাকে তাদের বাসায় দুই দিন আটকে রাখে।

পরবর্তীতে এ বিষয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসে বিচার-শালিস করলেও তারা কারও কোন কথা মানে না। গত বছরের ২৫ নভেম্বর রাতে তারা আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং আমার কাছে এক লক্ষ টাকা পাবে মর্মে জোরপূর্বক ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করায়। 

মরিয়ম বলেন, আমি কোথাও ন্যায় বিচার না পেয়ে আদালতের স্বরণাপন্য হই এবং আমার সাথে অভিযুক্তদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালতে মামলার কথা শুনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এএসআই ইলিয়াছ হোসেন অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে আমাকে শ^াসায়। তিনি আমাকে বলেন, ‘আমি কেন আদালতে মামলা করেছি, তাকে (এএসআই ইলিয়াছ) জিজ্ঞাসা করিনি কেন, আদালতে মামলা অভিযুক্তদের আমি কিছুই করতে পারবোনা।’

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এএসআই ইলিয়াছ হোসেন বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। ওই নারী একাধিক অভিযোগ করেছে থানায়। যখন তার বসত ঘর নিয়ে ঝামেলা হয় এমন অভিযোগ পেলে তিনি নিজেই তাৎক্ষনিক সেখানে গিয়ে তা প্রতিহত করে উভয় পক্ষকে থানায় আসতে বললেও মরিয়ম থানায় আসেন নি। পরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি আদালতে মামলা করেছি। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ