জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল সৌম্য সরকারের। সাদা বলের ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন ভালো খেলতে পারছিলেন না। মাঝে অনেকটা সময় হারিয়ে যাওয়া। এরপর জাতীয় দলে তাঁর ফিরে আসা নিয়ে সমকালের সঙ্গে মন খুলে কথা বলেছেন সৌম্য সরকার।
সমকাল: ওয়েস্ট ইন্ডিজে গ্লোবাল টি২০ কি আপনার জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিল?
সৌম্য: গ্লোবাল টি২০ আমার টি২০-এর জন্য অনেক বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল। সত্যি কথা বলতে, লঙ্কান টি১০ খেলার প্রস্তুতি নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছিলাম। গ্লোবাল টুর্নামেন্ট খেলে, ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে শ্রীলঙ্কা যাব। গ্লোবালে ভালো করায় তাসকিন বলছিল– ভাইয়া ভালো খেলেছ, টি২০তে থেকে যাবা। আমি বলেছি, নিলে অবশ্যই খেলব। সবারই তো একটা পরিকল্পনা থাকে। আমি বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলেছি। এর পর বাদ পড়েছি। স্বাভাবিকভাবে টি২০ পরিকল্পনায় ছিলাম না। গ্লোবালে ভালো করায় দলে নেওয়া হয়।
সমকাল: প্রধান নির্বাচক বলেছিলেন, সৌম্য ও তামিম ওপেন করবে। এটা কি খেলোয়াড়কে আত্মবিশ্বাস দেয়?
সৌম্য: এটা সব সময় হওয়া উচিত। আপনি যখন একজন খেলোয়াড়কে ব্যাক করবেন, সে চাইবে সেরাটা দিই। একজন খেলোয়াড় একটি বা দুটি সিরিজ খারাপ খেলতে পারে। আপনি তাকে নিয়েছেন ভালোর জন্য। তাকে চিনেন বিধায় নিয়েছেন। এখন ছয়টি ম্যাচ খেলে যদি না সুযোগ দেন, তাহলে নতুন আরেকটা খেলোয়াড়কে ছয়টি ম্যাচ সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য ব্যাক করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাতে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। টিম বন্ডিংয়েরও একটা ব্যাপার থাকে। সবার জন্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ। আর প্রধান নির্বাচক দল দিয়ে বলে দিয়েছেন কে ওপেন করবে। এটা বাংলাদেশে নতুন। ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে।
সমকাল: মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক না থাকলে দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার হবেন। এটা নিয়ে ভেবেছেন?
সৌম্য: না, ভাবিনি (হাসি)। হ্যাঁ, সিনিয়র ক্রিকেটার হয়ে যাব। আসলে তারা পাঁচজন এমন ভাবে খেলে গেছেন, আর কেউ সিনিয়র হতেই পারেনি (হাসি)। আপনি যদি এখন বলেন সৌম্য সিনিয়র হয়ে গেছে, অনেকের মানতেও কষ্ট হবে (হাসি)। কারণ তারা ১৫ বছর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করে গেছেন এবং সবাই বলেছেন– সিনিয়র খেলোয়াড়, সিনিয়র খেলোয়াড়। সে কারণে কেউ আর সিনিয়র হতে পারেনি।
সমকাল: গত পাঁচ বছরে জাতীয় দলে অনিয়মিত থাকলেও বাইরে থেকে দেখে কী পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন?
সৌম্য: খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। তারা সবাই সবার রোলটা জানে। সবার ভেতরে উন্নতি করার একটা তাগিদ দেখতে পাচ্ছি। এটা খুব বড় পরিবর্তন। আগে অপশনাল প্র্যাকটিস হলে একজন বা দু’জন যেত। আমি যখন ছিলাম তখন মুশফিক ভাই একা যেতেন। পরে দেখেছি, পুরো দলই অনুশীলনে গেছে। দল হিসেবে কীভাবে জেতা যায়, সেটা ডেভেলপ করেছে। হয়তোবা শেষ কয়েকটি ম্যাচে ভালো করিনি। কারণ হলো বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার চলে যাচ্ছে। সে জায়গায় সেটেল হতেও তো সময় লাগে।
সমকাল: সামাজিক মাধ্যম বা গ্যালারি থেকে যে আচরণ হয়, সেগুলো কি মানিয়ে নিতে পেরেছেন?
সৌম্য: দেখেন, কাজটা অত সহজ না। আপনি আপনার অফিসে কাজ করছেন। আপনাকে যদি পাশের বিল্ডিং থেকে বলে ওকে রেখেছেন কেন? ওতো ভালো সাংবাদিক না। আপনি কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে ফেডআপ হয়ে যাবেন। নেওয়াটা খুবই কঠিন। সেটা নিজের দেশের মানুষের কাছ থেকে নেওয়া আরও কঠিন। দেশে ভালো খেললে যে মানুষটি হাত তালি দিচ্ছে, সেই খারাপ করলে ভুয়া বলছে। এটা মানা খুব কষ্ট। সব খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন। আবার কিছু বলারও নেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম য সরক র ব প এল র জন য সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।
২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।
দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।
স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।
তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।
ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।
আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিংদেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।
সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে