আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পেছাল
Published: 23rd, January 2025 GMT
চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় এক মাসেরও বেশি সময় পিছিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১২ মার্চ করা হচ্ছে। বোর্ড অনুমোদন করলে তার কয়েক দিন পর অর্থ ছাড় হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য গত জুনভিত্তিক দেওয়া বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে। চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বারবারই কর আহরণ বাড়ানোর বিষয়টি অনেক গুরুত্ব পায় বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, শুধু চতুর্থ কিস্তির জন্য নয়, আগের কিস্তিগুলোতেও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি।
সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধি দল কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়। একই সঙ্গে কর-জিডিপি অনুপাত বছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্তজুড়ে দেওয়া হয়। সরকার এ শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে। বাড়তি রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নানা মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ওষুধ, মোবাইল ফোন সেবা, রেস্তোরাঁ, পোশাক, মিষ্টিসহ কয়েকটি পণ্য ও সেবায় বাড়তি শুল্ক-কর কমায় সরকার। এতে করে বাড়তি রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইএমএফের স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গতকালও অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বাড়ানোর অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি দ্রুত কর আদায় ও নীতি গ্রহণ সংস্থাকে আলাদা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
মূলত রাজস্ব বাড়ানোর শর্ত প্রতিপালন নিয়ে দরকষাকাষির কারণেই চতুর্থ কিস্তি পিছিয়ে যাচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর আইএমএফ মিশন প্রধান সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও অর্থ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, চলমান কর্মসূচির আওতায় ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৩০ কোটি করতেও তারা সম্মত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ২০৪ কোটি ডলার। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ এখন যে রিজার্ভ আছে, এর সমান ছিল।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ফলে মোট রিজার্ভ ও নিট রিজার্ভ—উভয়ই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এর আগে ১৪ এপ্রিল রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয় ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১১ কোটি ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো আয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ছে। গত মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে; এক মাসের হিসাবে যেকোনো সময়ের চেয়ে এটি বেশি। আর চলতি মাসের ২৬ দিনে এসেছে ২২৭ কোটি ডলার। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই রিজার্ভ বাড়ে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপর চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২২ টাকায় অনেক দিন ধরে স্থির আছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। ৮৫ টাকার ডলার বেড়ে ১২৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর নানা উদ্যোগের কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। ২০২২ সালের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে অনেক ব্যাংক।