৫ বলে ৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস ক্যাম্ফারের
Published: 11th, July 2025 GMT
ছেলেদের পেশাদার ক্রিকেটে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ বলে ৫ উইকেট নিয়েছেন আয়াল্যান্ডের পেস অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার। ডাবলিনে গতকাল ইন্টার-প্রভিন্সিয়াল টি-টোয়েন্টি ট্রফিতে নর্থ-ওয়েস্ট ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে মানস্টের রেডসের হয়ে এই কীর্তি গড়েন তিনি।
আরও পড়ুননামের ভারেই কি নুয়ে পড়ছে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ১ ঘণ্টা আগেআগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৮ রান তুলেছিল মানস্টের। তাড়া করতে নেমে ১১ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৮ রান তুলেছিল নর্থ-ওয়েস্ট। ১২তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মানস্টের অধিনায়ক ক্যাম্ফার। সেই ওভারে তাঁর প্রথম চার বলে ছক্কাসহ এসেছে ৯ রান। কিন্তু শেষ দুই বলে আউট হন জ্যারেড উইলসন ও গ্রাহাম হিউম। বেন হোয়াইট মাঝের ওভারটি করার পর ১৪তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করেন ক্যাম্ফার। আশ্চর্যের বিষয়, পরের দুটি বলেও উইকেট পান এই ডানহাতি পেসার। আউট হন যথাক্রমে রোবি মিলার ও জশ উইলসন।
অর্থাৎ ১১.
জয়ের পর ক্যাম্ফার বলেছেন, ‘ওভার পরিবর্তন হওয়ায় কী ঘটছে, তা বুঝতে পারছিলাম না। সহজভাবে নিজের কাজটা করে গেছি, সৌভাগ্যবশত ফল পেয়েছি।’ ক্যাম্ফারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আরও একজন ব্যাটসম্যান থাকলে ৬ বলে ৬ উইকেট নিতে পারতেন কি না? উত্তর শুনুন তাঁর মুখেই, ‘না, আমার মনে হয় না।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশ দলে ‘কুশল মেন্ডিস’ চান মুশতাক৯ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪ বলে ৪ উইকেট নিয়েছেন ক্যাম্ফার। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কীর্তিটি গড়েছিলেন। এ সংস্করণে ৪ বলে ৪ উইকেট নিয়েছেন আরও পাঁচজন বোলার—রশিদ খান, লাসিথ মালিঙ্গা, জেসন হোল্ডার, ওয়াসিম ইয়াকুব ও হারনান ফেনেল। গত বছর মালির বিপক্ষে ৪ বলে ৪ উইকেট নেন লেসোথো পেসার ওয়াসিম। আর্জেন্টিনার পেসার ফেনেল গত বছরই ৪ বলে ৪ উইকেট নেন কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের বিপক্ষে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ৪ বলে ৪ উইকেট নেন আফগানিস্তানের তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খান। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেরাদুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে কীর্তিটি গড়েন তিনি। একই বছর সেপ্টেম্বরে পাল্লেকেলেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেট নেন লঙ্কান কিংবদন্তি মালিঙ্গা। ২০২২ সালে ব্রিজটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ বলে ৪ উইকেট নেন ক্যারিবিয়ান পেস অলরাউন্ডার হোল্ডার।
প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫ বলে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি জিম্বাবুয়ের নারী অলরাউন্ডার কেনিস এনদোলোভুর। গত বছর ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ঈগলস উইম্যানের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ৫ বলে ৫ উইকেট নেন এনদোলোভু।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৪ উইক ট ন ন উইক ট ন য় ৫ উইক ট ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।