দেখতে খুবই সাধারণ। কিন্তু বাড়িটি একেবারে সাধারণ নয়। আদতে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে ধানের তুষ দিয়ে। মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে আকমাতবেক উরাইমভের নতুন এই বাড়ি বানানো হয়েছে ধানের তুষ দিয়ে।
পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে বানানো এ ধরনের বাড়িগুলো কিরগিজস্তানে জনপ্রিয় হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকিতে থাকা দেশটিতে এমন পরিবেশবান্ধব বাড়ি আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। কিরগিজস্তানে পানির সংকটও রয়েছে।
এ ধরনের বাড়ি ব্যবহারের আগে নানা বিকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন আকমাতবেক। শেষ পর্যন্ত ধানের তুষের ব্লক দিয়ে বাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর মতে, এটাই সেরা বিকল্প। তুলনামূলক সস্তাও।
কিরগিজস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের কায়জাল-কিয়া গ্রামে আকমাতবেকের বাড়ি। তিনি জানান, নির্মাণকাজে সুবিধা ও স্বল্প খরচের কারণে নির্মাতাদের কাছে তুষের ব্যবহার দিন দিন সুবিধাজনক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আকমাতবেক এএফপিকে বলেন, ‘মানুষ আগে এটা সম্পর্কে জানত না। এখন তাঁরা চোখের সামনে এই বাড়ি দেখে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আলাপ করছেন। অনেকে ফোন করে বিস্তারিত জানতে চাইছেন।’
ধানের তুষ দিয়ে বাড়ি তৈরির ব্লক বানানোর কাজে অগ্রপথিকদের একজন নুরসুলতান তাবালদেয়েভ। স্থানীয় বাতকেন এলাকায় তাঁর বাড়ি। সেখানেই একটি ওয়ার্কশপ রয়েছে তাঁর। ওই ওয়ার্কশপে পরিবেশবান্ধব তুষের ব্লক বানান শ্রমিকেরা। সাধারণত ধানের তুষ ফেলে দেওয়া হয় বা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেগুলোকেই কাজে লাগাচ্ছেন তাবালদেয়েভ।
এএফপিকে নুরসুলতান জানান, একেকটি ব্লকের ৬০ শতাংশ থাকে ধানের তুষ। বাকিটা কাদা, সিমেন্ট আর রাসায়নিক মুক্ত আঠা। সব মিশিয়ে শুকানোর পর এই ব্লক সিমেন্টের মতো ভীষণ শক্ত হয়ে যায়। শ্রমিকেরা কাজ করার সময় মাস্ক ব্যবহার করেন।
শৈশবে বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন নুরসুলতান। তখনই প্রচলিত কংক্রিটের বদলে বিকল্প কিছু দিয়ে বাড়ি বানানোর ভাবনা তাঁর মাথায় চেপে বসে। এখন তাঁর বয়স ২৭ বছর। গত ৫ বছরে ৩০০ ঘর বানিয়েছেন নুরসুলতান। প্রথমটি বানিয়েছিলেন কাঠের গুঁড়া দিয়ে। পরে সেটাও বদলে নেন। এখন ধানের তুষের ব্লক দিয়ে বাড়ি বানানোর কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
বাড়ি তৈরির জন্য ধানের তুষ ব্যবহার করে বানানো ব্লক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিরগিজস্তানের কায়জাল-কিয়া গ্রামে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ