চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কখনও সমস্যায় পড়েনি
Published: 24th, January 2025 GMT
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে অনেক বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কখনোই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। প্রতিটি সরকার চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গত বুধবার চায়না মিডিয়া গ্রুপ বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার বেইজিং থেকে সাংহাই যাওয়ার সময় সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচনা বিষয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তি অনেক বেশি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আছে। আলোচনায় সব বিষয়ই এসেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আলোচনায় বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্প, বিনিয়োগ– এই জিনিসগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। রাজনৈতিক কিছু বিষয় নিয়েও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমাদের সরকার তো অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার তো দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না। এটা নিয়ে হয়তো কারও মনে দ্বিধা থাকতে পারে– সরকার কতদিন থাকবে। এই সময়ে বিনিয়োগ বা চুক্তিতে যাওয়া কতটুকু লাভজনক হবে, কিংবা টেকসই হবে কিনা ইত্যাদি। আমার মনে হয়, এই সফরের মাধ্যমে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল, সেগুলো খুব সহজে দূর করা গেছে।
দুই দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতার প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, এই সফরে যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, তাদের বলেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোনো বিশেষ সরকার বা রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করে না। ১৯৭৫ সালে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর আমরা এ বছর সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী পালন করছি। আমাদের সরকার অনেক বার পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কখনোই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সমস্যার সম্মুখীন হয়নি।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি সফরে চীনে অবস্থানরত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন চীনা অটোমোবাইল কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) উৎপাদন কারখানা স্থাপনের কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। সাংহাইয়ের উপকণ্ঠে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদন কারখানা পরিদর্শনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
বুধবার সন্ধ্যায় সাংহাই শিল্প ও বাণিজ্য ফেডারেশনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আলোচনার সময় তারা চীনা উৎপাদকগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিশেষ করে চট্টগ্রামে অবস্থিত চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন এবং চট্টগ্রাম ও সাংহাইয়ের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট র উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল