শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় চিত্রশালার দোতলায় লাল রঙের দেয়ালজুড়ে জুলাই অভ্যুত্থানের দ্রোহ, সাহসিকতা, ক্ষোভ ও তৎকালীন সরকারের নৃশংসতার দৃশ্য জীবন্ত হয়ে উঠেছে। গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ের নানা ছবি ও খবর দিয়ে সাজানো হয়েছে দেয়াল। প্রদর্শন করা হচ্ছে নানা ভিডিওচিত্র। গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া বিশেষ এ প্রদর্শনী স্মরণ করিয়ে দেয় সেই কঠিন সময়কে, তারুণ্যের অসীম সাহসিকতাকে।

প্রদর্শনী দেখতে এদিন পিআইবি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দীন ভূঁঞা স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছিলেন। আন্দোলনের সময়কার ছাত্র-জনতার ঢাল হয়ে দাঁড়ানো ছবিগুলো ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন সন্তানদের। তিনি বলেন, ‘আয়োজনটা দারুণ। চারদিকে এখন অনেকে অনেক রকম কথা বলা শুরু করেছেন। ভাবটা এমন যেন সংস্কারের তেমন প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাচ্চারা প্রাণ দিল, অঙ্গহানি হলো, জিজ্ঞেস করে দেখুন বাচ্চারাই বলবে, তারা দেশটার আমূল পরিবর্তন চেয়েছে। এ কথাটা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে এমন প্রদর্শনী আরও দরকার।’
প্রথম আলোর আয়োজনে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী ঘুরে দেখছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। একজন আরেক জনকে ২৯ জুলাইর পত্রিকার প্রথম পাতার ছবিটি দেখিয়ে বলেন, ‘এটা তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের মা। ডিবি কার্যালয়ে আটকের সময় সন্তানকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখতে দেওয়া হয়নি।’
৩১ জুলাই মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি চলাকালে ঢাকার হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের গাড়িতে করে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নুসরাত হক নামের তরুণী পুলিশের গাড়ির সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আন্দোলনের সময় ছবিটি সাহসের বাতিঘর হয়ে হাজির হয়। 

খুলনার শিববাড়ি মোড়ের স্মৃতিস্তম্ভের একেবারে চূড়ায় উঠে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে বিজয় উদযাপনের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন সিলমী সাদিয়া। প্রদর্শনী 
দেখতে এসে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের দিন ৫ আগস্ট বিকেলে আমি সেখানে ছিলাম। নতুন বাংলাদেশে খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ানোর স্বাদ পেয়েছিলাম।’ 
প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ও ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। 
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ আন্দোলন প্রমাণ করে সহিংস স্বৈরাচারের পতন অবশ্যম্ভাবী এবং সে পতন সবসময় লজ্জাজনক হয়। আমি মনে করি, জুলাই-আগস্টে যে অভ্যুত্থান ঘটেছে, তা আমাদের ছাত্রসমাজের অসীম সাহসিকতার উদাহরণ।’ 

শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থী সমাজের প্রতি অতীতে অনেক অন্যায় হয়েছে। তাদের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এখন সুযোগ এসেছে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ গড়ার। সবাই মিলেই এ বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ উদ্বোধন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। পরে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও অতিথিরা প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এটি সবার জন্য খোলা থাকবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই গণহত য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রান্তিকালে বিসিবির প্রস্তুতির অভাব দেখছেন তামিম

জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের নির্ভরতার প্রতীক তামিম ইকবাল মনে করছেন, সাকিব-মুশফিক-রিয়াদদের বিদায়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার জন্য আগেভাগে প্রস্তুত ছিল না বিসিবি। এই পরিস্থিতিতে হাই পারফরম্যান্স (এইচপি), টাইগার্স ও ‘এ’ দলের কাঠামোতে আরও বেশি বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিম বলেন, ‘পাঁচজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সরে গেছে, যাদের অভিজ্ঞতা ১৫-১৭ বছরের। তারা হাজারের বেশি ম্যাচ খেলেছে। এই মানের ক্রিকেটারদের বিদায়ে শূন্যতা আসবেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বোর্ড কি এই ক্রান্তিকালের জন্য প্রস্তুত ছিল?’

তামিমের মতে, জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই এখন ৭-১০ বছর ধরে খেলছেন। এই সময়টাতে তাদের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য বিকল্প খেলোয়াড় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলকে যতটা সম্ভব সুযোগ-সুবিধা দিন, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে এইচপি, টাইগার্স ও “এ” দলে বেশি ফোকাস করুন। এই জায়গাগুলোতে ভালো বিনিয়োগ না হলে জাতীয় দল সবসময় ধুঁকতেই থাকবে।’

তবে সামগ্রিকভাবে দেশের ক্রিকেট নিয়ে আশাবাদী তামিম। তার ভাষায়, ‘আমরা কখনোই তিন সংস্করণে একসঙ্গে ভালো করিনি। এই দলটাকেও যদি সময় দেওয়া হয়, তারা ঘুরে দাঁড়াবে।’

ভবিষ্যৎ তারকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তামিম বেশ কয়েকজনের নাম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পেস বিভাগে তাসকিন আছে, নতুন নাহিদ রানা ভালো করছে। তাইজুল চমৎকার স্পিনার। হৃদয়, জাকের আলীরাও সম্ভাবনাময়। এদের মধ্য থেকেই কেউ কেউ বড় তারকা হয়ে উঠতে পারে।’

সবশেষে তিনি বোর্ডের প্রতি ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস দিন, বোঝান– তারা বোর্ডের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ