জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, জেল-জরিমানাসহ নানামুখী পদক্ষেপেও মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য থামছে না। সারা বছর চলছে পুকুর ও ফসলি জমির ঊর্বর মাটি লুট। এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত প্রভাবশালী চক্র। তারা কৌশলে কৃষকদের জিম্মি করে পুকুর ও জমির ঊর্বর মাটি লুট করছে। পৌর শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে চক্রের এমন দৌরাত্ম্য।
জানা গেছে, রাত-দিন তারা পুকুর ও ফসলি জমির মাটি কেটে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়ক ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক হয়ে ট্রাক্টর করে নিয়ে যাচ্ছে। মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে এলাকার সড়কগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ড্রেজার, ভেকু দিয়ে জমি ও পুকুর গভীর করে মাটি কাটা চলছে। এসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের জন্য। অসহায় কৃষকরা না বুঝেই অল্প পরিমাণ টাকার লোভে তাদের জমি ও পুকুরের মাটি কাটতে দিচ্ছেন। চুক্তিমতে ১-২ ফুট গভীর করে খনন করার কথা থাকলেও তারা ১০-১২ ফুট গভীর করে মাটি কাটছে। না বুঝে মাটি কাটতে দিয়ে এখন হতাশায় কৃষক। এসব মাটি নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ফসলি জমি ভরাটের কারণে উপজেলায় গত দুই বছরে প্রায় ৬৩ হেক্টর ফসলি জমিতে আবাদ হয়নি। ইতোমধ্যে ফসলি জমি ও পুকুরের মাটি কাটা বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন মহলে লিখিত করেছেন ভুক্তভোগীরা। তবুও মাটি কাটা বন্ধ হয়নি।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কালাই পৌর এলাকায় কাজীপাড়া মহল্লায় পুকুর সংস্কারের নামে উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে আড়াই মাস ধরে মাটি কেটে বিক্রি করছেন তালুকদারপাড়া মহল্লার রুহুল আমিন তালুকদার। উদয়পুর ইউনিয়নের তালোড়া বাইগুনী গ্রামের বাবু মনিশ চৌধুরীর পুকুরের মাটি বিক্রি করছেন আওড়া গ্রামের আবদুল হাকিম, উদয়পুর ইউনিয়নের বহুতি গ্রামের মাটি কেটে বিক্রি করছেন সুজাউল ইসলাম, জিন্দারপুর ইউনিয়নের বেলগড়িয়া গ্রামের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন রফিকুল ইসলাম, মাত্রাই ইউনিয়নের শালগুন গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, পুনট  ইউনিয়নের দেওগ্রামের বিপ্লব হোসেন চৌধুরী, নান্দাইল গ্রামের মাটি কাটছেন বুলেট হোসেনসহ অনেকে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছেন তারা।
পুনটের বাসিন্দা ছাইদুর রহমান জানান, মাটিখেকোদের অধিকাংশই স্থানীয় প্রভাবশালী। তারা পুকুর ও জমির মালিকদের অল্প পরিমাণে টাকা দিয়ে ওপরের ২-১ ফুট মাটি কিনে নেয়। তার পর ধীরে ধীরে পুকুর ও জমির মাটি সমানতালে খনন না করে কোথাও গভীর আবার কোথাও উঁচু রেখে কাটতে থাকে। কৃষকরা তাদের ভয়ে কথা বলতে পারেন না।
মোলামগাড়ীহাট এলাকার কৃষক বকুল মিয়া বলেন, দিন-রাত কৃষকের পুকুর ও জমির মাটি কাটে চক্র। নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা রাতে মাটি কেটে নিয়ে যায়। প্রশাসন যখন অভিযান চালায়, তখন ২-৪ ঘণ্টা মাটি কাটা বন্ধ রাখে। আবার ওই সময় পুষিয়ে নিতে শুক্র ও শনিবার মাটি কাটা জোরদার করে তারা। কারণ এ দু’দিন অফিস বন্ধ থাকে।
কালাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার বলেন, মাটি লুটের জন্য উপজেলায় বেশ কয়েকটি গ্রুপের শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। প্রশাসন চেষ্টা করেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখার রহমান বলেন, বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। ড্রেজার, ভেকু, ট্রাক্টর জব্দ ও জরিমানা করেও মাটি কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। সামনে আরও কঠোর অভিযান চালানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জিআই সনদ পেলো কিশোরগঞ্জের পনির ও রাতাবোরো ধান 

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের সনদ পেয়েছে কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান ও জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য অষ্টগ্রামের পনির।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজিত ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সনদ গ্রহণ করেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।

অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান ও পনিরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৪টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

হাওরে ধানের বাম্পার ফলন, দাম কমে যাওয়ায় চিন্তায় কৃষক

আজারবাইজানের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে সম্মত প্রধান উপদেষ্টা

শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বিশিষ্ট শিল্পী, অভিনেত্রী ও সঙ্গীত পরিচালক আরমিন মুসা ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার নাকফজলি আমচাষি সমবায় সমিতির লোকজন।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান ও জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য অষ্টগ্রামের পনির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি এ জেলার কৃষি ও খাদ্যশিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এতে স্থানীয় এ দুটি পণ্যের মান ও খ্যাতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

ঢাকা/রুমন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ