উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো দরকার
Published: 27th, January 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দক্ষতা বাড়ানো অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের অধিকার ও পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়গুলো নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
গতকাল রাজধানীতে এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাটের সংস্কার শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং এনবিআরের চেয়ারম্যান মো.
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সম্প্রতি অনুমোদিত স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় শিল্পের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা এবং অভিন্ন করের হার চালুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান জানান, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ন্যাশনাল সিঙ্গল উইন্ডো পদ্ধতি পুরোদমে চালু হবে। শিগগিরই আয়কর প্রদানের পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় করা হবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ও এসএসজিপি প্রকল্পের কম্পোন্যান্ট ম্যানেজার ড. মোস্তফা আবিদ খান। প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান, এনবিআরের সদস্য এ. কে. এম বদিউল আলম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজিব এইচ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী চীন পাঠাচ্ছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল
চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। এ প্রকল্পে বেইজিংয়েরও আগ্রহ আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরেজমিনে তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে চীনের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল।
আজ সোমবার সকালে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে আলোচনায় এ তথ্য জানান ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক দেশটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পের বিষয়ে চীন যে তীব্র আগ্রহী, তা আসাদ আলম সিয়ামকে জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
চীনের রাস্ট্রদূত জানান, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে তারা কাজ করছেন।
এ ছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়েও আলোচনা হয়।
# পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে চীন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক # কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে চীনএ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেওয়া বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে (জিজিআই) যোগ দিতে বাংলাদেশকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে জিজিআইয়ের বিস্তারিত এবং এ উদ্যোগ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের আগ্রহের কথা জানানো হয়। আর জুলাই গণ–অভুত্থ্যানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ওপর এসেছে, যা সবচেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন।
গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে মে মাসে একটি চিঠি দেয়। তাতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরে গত জুলাইয়ে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠায় ইআরডি। চিঠিতে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অতীতে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন ও ভারত। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়েত্রা তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারও চেয়েছিল, প্রকল্পটিতে যেন ভারত অর্থায়ন করে।
চীন সফর নিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘চীন তো রেডি, কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ইন্ডিয়া করে দিক, এই প্রজেক্টটা করলে এই প্রজেক্টটার জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে। ঠিক আছে? যা সাফ সাফ কথা, রাখঢাক নাই।’
তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাকিটা করা হবে সরকারি অর্থায়নে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।