পানিশূন্য খাল, বোরো আবাদ নিয়ে উদ্বেগে কৃষক
Published: 28th, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালে এবারও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে চলতি মৌসুমের বোরো চাষাবাদ। উদ্বেগে রয়েছেন কৃষক। পদ্মা নদীতে বড় চর পড়া ও পানির স্তর নেমে যাওয়ায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের এ অবস্থা বলে দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের।
জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা সব খালে পানি আসার কথা ছিল। জানুয়ারির শেষেও পানির দেখা মেলেনি। এরই মধ্যে বোরো ধান, গম, সরিষা, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে গত ১৫ অক্টোবর থেকে। চলছে ধান রোপণ কার্যক্রম।পানি না থাকায় বিপদে পড়েছেন কৃষক।
কৃষকের ভাষ্য, সেচ খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয় মাত্র ৩০০ টাকা। শ্যালো মেশিন দিয়ে করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এ কারণে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক এনামুল বলেন, জিকে খালে পানি না থাকলে গভীর নলকূপেও থাকে না। এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় শুকনো মৌসুমে।
একই এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরও জিকে খাল থেকে পানি পাইনি। এবার ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ আছে। যতটুকু বুঝতে পারছি, এ বছরও আসবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাইনি, এবারও হয়তো হবে না। ডিজেল ইঞ্জিনের মাধ্যমে যে পানি পাওয়া যায়, তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে চার জেলার ১৩ উপজেলার প্রায় পৌনে ৫ লাখ একর জমি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, জিকে প্রকল্পের আওতায় ভেড়ামারার চাঁদগ্রাম ও বাহিরচর ইউনিয়নের ফসলি জমি পড়েছে, যার পরিমাণ ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর। এর মধ্যে বোরো ধান ৬৩৫ হেক্টর, সরিষা ১১৯ ও বাকি জমিতে ভুট্টা, গমসহ অন্য ফসলের আবাদ হয়েছে। কৃষকদের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অনেকে বিএডিসি সেচ প্রকল্পের আওতায় এসেছেন।
এ বিষয়ে ভেড়ামারার জিকে পাম্প
হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাস সেচ প্রকল্পের কাজ চলে। এটি মূলত পদ্মা নদীর
ওপর নির্ভরশীল। এখন নদীর পানির লেভেল
সাড়ে ৫ মিটার। সাড়ে ৪ মিটারের নিচে সেচ কার্যক্রম সম্ভব নয়।
নদীতে বড় চর পড়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। পানির লেভেল যদি ঠিক থাকে এবং ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হলে ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্প শুরু করা যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র আওত য় স চ প রকল প র
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।
এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।
সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/ইভা