প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগীরা আধুনিক উদারতাবাদের বিরুদ্ধে পুরোপুরি যুদ্ধ শুরু করছেন। যদিও ঠিক কীভাবে উদারতাবাদকে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

এর অর্থ সাধারণত ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা দেওয়া, যেমন– বাকস্বাধীনতা ও সম্পত্তির মালিকানা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সারাবিশ্বের মধ্যে বিশেষত ইউরোপে নিজ কর্মে পরিচিত উদারপন্থি রাজনীতিবিদ ও সমমনা ভোটাররা ধারণাটির মধ্য দিয়ে অনেক বিস্তৃত মূল্যবোধ ও অনুশীলনকে গ্রহণ করেছেন। সেগুলো মাথায় রেখে ধারণাকে আমি আধুনিক উদারনীতি হিসেবে চিহ্নিত করছি। 

এ ধারণার মধ্যে রয়েছে উচ্চশিক্ষার চমৎকার ব্যবস্থা, যেখানে শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকরা শিক্ষাদান ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতা ভোগ করেন; জাতি, নারী-পুরুষ ও তাদের সম্মিলনে সমঅধিকার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা থাকে; নির্বাচিত নেতাদের ওপর তদারকিমূলক স্বাধীন কর্তৃপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ যেমন সংবাদমাধ্যম; বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যে উৎসাহ প্রদান; সেই সঙ্গে অভিবাসন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, বহুপক্ষীয় ও বহু সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গ্রহণে আগ্রহ। 

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ও সহযোগীরা মাঝে মাঝে উদারনৈতিক মূল্যবোধ ও অনুশীলন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যাতে আগে উভয় পক্ষের নেতাদের সমর্থন ছিল। যেমন অভিবাসীদের স্বাগত জানানো। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রায়ই সমালোচনা দেখা যায়। ট্রাম্প এই ‘আচার’-এর অবসান টানছেন। ট্রাম্প এখন আধুনিক উদারতাবাদকে আরও বেশি আক্রমণ করছেন। যেমন তিনি মহাপরিদর্শকদের বরখাস্ত, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ফেডারেল তহবিল স্থগিত, অভিবাসন সীমাবদ্ধ করা, ট্রান্সজেন্ডার অধিকার ছাঁটাই এবং তাঁর প্রথম ৯ দিনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা আগের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর অনেক সিদ্ধান্ত হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসসহ অন্যান্য উদার পন্থাবিরোধী রাজনীতিবিদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ট্রাম্প হয়তো আমেরিকার বিদ্যমান আধুনিক উদারনীতির অনেকটাই ধ্বংস করে দেবেন। যদিও সংবিধানে জন্মগত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি রয়েছে, তবে অনেক উদারপন্থি অভ্যাস আইন প্রণয়ন বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে মোটামুটি সহজে পরিবর্তন করা যেতে পারে। আমার সন্দেহ, ট্রাম্পের ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে করা অনেক মামলা খারিজ হবে। রক্ষণশীল বিচারকরা আদর্শিকভাবে তাদের সঙ্গে যুক্ত একজন প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করার জন্য আইনে অস্পষ্টতা খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন।

আধুনিক উদারতাবাদের বেশির ভাগই আইনসিদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আবার তা খারিজ হয়ে যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় সমর্থনের একটি শক্তিশালী ভিত্তির দরকার পড়ে না। কিছু নীতি আধুনিক উদারনীতির অংশ এবং উদারপন্থি রাজনীতিবিদদের দ্বারা জোরালোভাবে সমর্থিত। যেমন সামাজিক নিরাপত্তানীতি ভোটাররা পছন্দ করেন। তাই ট্রাম্প ও বিশ্বজুড়ে উদার পন্থাবিরোধী রক্ষণশীল নেতারা সাধারণত এসব নীতি বহাল রাখতে নারাজ। কিন্তু আধুনিক উদারতাবাদের অন্যান্য অংশ হিসেবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী অনুষদ রয়েছে, যেগুলোকে রিপাবলিকান কর্মকর্তারা খারাপ হিসেবে তুলে ধরেন। ডেমোক্র্যাটরাও প্রকৃতপক্ষে তা রক্ষা করেননি। তাই গড় ভোটাররা এসব নীতি গুরুত্বপূর্ণ বা দরকারি হিসেবে দেখেন না।

আমার উদ্বেগ, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা এমন একটি দেশে বাস করব, যেখানে করপোরেশনগুলোতে এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষ থাকবে। কারণ প্রেসিডেন্টের বৈচিত্র্যবিরোধী অবস্থানগুলো ব্যাপকভাবে গৃহীত হবে। এই নতুন পরিস্থিতি নিয়ে খুব কমই একাডেমিক গবেষণা হবে, যেখানে পরিবর্তনটা ধরা পড়বে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অনুষদকে ট্রাম্প প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। এখনই সময় উদার প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা এবং তার অনুশীলন অব্যাহত রাখা। 

আধুনিক জমানার উদারতাবাদ উদযাপন করার মতো অনেক কিছু রয়েছে। ইন্সপেক্টর জেনারেল ও সাংবাদিকরা প্রায়ই সরকারি কর্মকর্তাদের সরকারি তহবিলের অপব্যবহার থেকে বিরত রাখেন। বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগ নিশ্চিত করে; কেবল ‘বস’-এর বন্ধু হলেই সব সম্ভব নয়। অভিবাসীরা সৃজনশীলতা উপহার দেয়, কঠোর পরিশ্রম করে; যা শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও তাই। ট্রাম্প কেবল একটি সংস্কৃতি-যুদ্ধে জড়িত নন, যা অতি ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে পড়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক কম উদারতাবাদ দিয়ে গণতন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। তাকে অবশ্যই থামাতে হবে।

পেরি বেকন জুনিয়র: ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক; দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।

জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ছিল। ছবি:শিল্পকলা একাডেমি

সম্পর্কিত নিবন্ধ