তাড়াশে সমিতির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক মল্লিক। পরিবার নিয়ে এখন তিনি দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তালম ইউনিয়নের নামাসিলট গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মল্লিকের সঙ্গে খোশালপুর সার্বিক ‘গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি’র সভাপতি জিয়াউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ ও কোষাধ্যক্ষ শফিউল্লাহ্র পরিচয় হয়। ২০২১ সালে তারা আবু বক্করকে প্রতিদিন লাখে দুইশ করে টাকা করে লাভ দেওয়ার কথা বলে সমিতিতে টাকা বিনিয়োগের কথা বলেন। অতিরিক্ত লাভে সংসারে সচ্ছলতা আসবে ভেবে আবু বক্কর ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। বিভিন্ন ব্যাংক-এনজিও থেকে নিজের ও স্ত্রীর নামে ঋণ নিয়ে ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় ১৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। প্রথম কয়েক মাসে লাভের কিছু টাকা পেয়েছেন। এরপর একসঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাভের টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আবু বক্কর জানান, বিনিয়োগ করা টাকা তুলে দিতে সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ অন্যদের অনুরোধ করেন তিনি। এতে কাজ না হলে সমিতির ঘরে নামাসিলট গ্রামের আলহাজ আমিনুল ইসলাম, মতিউর ইসলাম, মর্তুজা সরকার, খোশালপুর গ্রামের ফারুক ফকিরসহ গ্রামপ্রধানদের নিয়ে সালিশ করা হয়। সে সালিশে গ্রামপ্রধানরা টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেন। তারা তা মানেননি। উল্টো বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি-হুমকি দিচ্ছেন তারা। বাধ্য হয়ে তিনি ৪ জানুয়ারি তাড়াশ থানায় মামলা করেছেন।
থানার এসআই সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ বলেন, সমিতিতে আবু বক্করের মতো অনেকেই টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিছু পরিশোধও করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে দেওয়া ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা তুলতে না পারায় আবু বক্করের টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। সমিতি করে এভাবে টাকা বিনিয়োগ করা বৈধ কিনা এমন প্রশ্নে আবু সাইদ বলেন, দেখা করেন, কথা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ ব ন য় গ কর ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক