Samakal:
2025-08-01@01:58:24 GMT

শিমুল হত্যার বিচার হবে কবে!

Published: 2nd, February 2025 GMT

শিমুল হত্যার বিচার হবে কবে!

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সমকাল সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যার আট বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চ আদালতে বিচারিক কার্যক্রম এখনও ঝুলে আছে। শিমুলের পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের আন্তরিক উদ্যোগের অভাব, বিচারিক কাজে দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরুর নানা চতুরতায় বিচারিক কাজ গত আট বছরে কার্যত শুরুই হয়নি। সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল যখন মারা যান, তখন তাঁর কন্যা তামান্না ই ফাতেমার বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। ছেলে আল নোমান নাজ্জাতি সাদিকের বয়স ছিল ১০-১১ বছর। বর্তমানে মেয়ে তামান্না ই ফাতেমা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছেলে নাজ্জাতি সাদিক এইচএসসি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছেন।

২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় ছবি তুলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন সাংবাদিক শিমুল। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি গুরুতর আহত শিমুলের অবস্থার অবনতি হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে দুপুরের দিকে শিমুল মারা যান। পাশাপাশি শিমুল হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহার খাতুন ওই দিন দিবাগত রাতে সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ৩৮ জনকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন এবং আছেন বহাল তবিয়তেই। মামলাটি তুলে নিতে নানা প্রলোভনের সঙ্গে আসামিদের প্রচ্ছন্নভাবে নানা হুমকি-ধমকিও সহ্য করতে হচ্ছে নুরুন্নাহারকে। 

খুনি মিরুসহ সব আসামি সরকার বদলে গা-ঢাকা দিলেও যে কোনো সময় ক্ষতি করতে পারে বলে পরিবারের আশঙ্কা। শেষ পর্যন্ত স্বামী হত্যার বিচার পাবেন কিনা– এ নিয়েও রয়েছে হতাশা। ছেলেমেয়েও বাবা হত্যার বিচার নিয়ে যারপরনাই সন্দিহান। তাই বিচার প্রক্রিয়া স্বল্প সময়ে শেষ করার জন্য সর্বশেষ আমি, আমরা– বাবাহারা দুই সন্তান সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। সমকালের শ্রদ্ধেয় প্রকাশক এবং প্রয়াত সম্পাদক গোলাম সারওয়ার নুরুন্নাহার ও তাঁর দুই সন্তানকে সমকাল পরিবার নিজ পরিবারের সদস্য হিসেবে শুরু থেকেই সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন, যা এখনও অব্যাহত। কিন্তু বর্তমানে গতিহারা মামলাটির অবস্থা স্থবির। 

বিচারবঞ্চিতদের কাতারে দীর্ঘ আট বছর ধরে শিমুল হত্যার বিচারও কি অধরা রয়ে যাবে? শিমুলের ছেলেমেয়ে তাদের বাবা হত্যার বিচার দেখতে পারবে না, এমনটি কি হওয়া উচিত? সাংবাদিকদের কাজের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েই তাদের কাজ করতে হয়। নানা ঝুঁকি বিবেচনা করেই তারা সংবাদের পেছনে ছোটেন। সত্য প্রকাশে তারা অবিচল। সাংবাদিকদের সুরক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু একজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত-নিপীড়িত কিংবা হত্যার শিকার হলে বিচার পেতে এত বিলম্ব হবে কেন?
আমরা এও মনে করি, দেশের যে কোনো নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার কিংবা নিপীড়ন-নির্যাতনের কবলে পড়লে আইনের শাসন বা বিচার কার্যক্রম কোনোভাবেই বিলম্বিত হওয়া উচিত নয়। খুনিদের অতি দ্রুত বিচার দাবির পাশাপাশি পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে আবারও স্মরণ করি বন্ধুবর আবদুল হাকিম শিমুলকে।

এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ 
প্রতিনিধি, সমকাল

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স মরণ পর ব র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও