নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ভূমিপল্লী আবাসন এলাকায় বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্য ও বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে জিয়াউল হক ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে।

২০২৪ সালের ১ নভেম্বর তিনি ভূমি পল্লী আবাসনের বাসাবাড়ির বর্জ্য অপসারণের তদারকির দায়িত্ব পান। পরে তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেয় ভূমিপল্লী কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত জিয়াউল হক ভুঁইয়া সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকার ৩নং রোডের বাসিন্দা।

ভূমিপল্লী কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো.

জামাল উদ্দিন খানের সভপতিত্বে ভূমিপল্লি আবাসনের সকল বাড়ি, ফ্লাট, প্লট মালিকদের অংশগ্রহণে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশগ্রহণকারীরা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, মামলা-বাণিজ্য, বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন, শারিরিক নির্যাতন এবং আবাসনের বাড়ি মালিকদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক লিফলেট বিতরণ ও ভূমিপল্লির সিকিউরিটি কর্তৃক চুরির বিষয়ে প্রমাণ দাখিল করা হয়।

এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকার সিকিউরিটি ইনচার্জ রিফাত ও সিকিউরিটি বিপ্লবের চাঁদাবাজ মো: জিয়াউল হককে চাদাঁবাজিসহ অন্যান্য অসৎ কাজে সহায়তা করে এবং গেটে আটককৃত মালামাল চোরাই বাজারে বিক্রি করে। দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলা ও অসৎ আচরণে জড়িত থাকায় তাদের দুইজনকে ৩১ জানুয়ারি চাকরিচ্যুত করেন সভার সভাপতি।

২০২০ সালে পোষ্টার নেতা জিয়াউল হক ভূমিপল্লি কমপ্লেক্স জামে মসজিদের প্রিয় শায়েখ আহমদুল্লাহকে (রাহা:) বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা মসজিদের ভিতরে অসম্মান ও লাঞ্চিত করতে চেয়েছিল। সাধারণ মুসুল্লিরা তাতে বাঁধা দেন।

তখন স্বঘোষিত পোষ্টার নেতা জনাব জিয়াউল হক নিরীহ নামাজী মো: আরিফ সিকদার এবং মো: মাহমুদকে মারধর করে এবং মসজিদে নামাজের সামনে রাখা কাঠ দিয়ে মাথায় আগাত করে হত্যা করার চেষ্টা করেন।

এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য জিয়াউল হককে মসজিদ কমিটি থেকে তখন বহিষ্কার করা হয় এবং ভূমিপল্লিবাসী তার বিরুদ্ধে ২০২০ সলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

ওই বছর ভূমিপল্লি কমপ্লেক্স জামে মসজিদের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বহিষ্কার ও হত্যাচেষ্টা মামলাকে তিনি এখন রাজনৈতিক মামলা অবহিত করে ভূমিপল্লিতে পোষ্টার লাগিয়ে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করেছেন। 

ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকায় ব্যবসায়ী মো: মোজাম্মেল জানান, তার কাছ থেকে বিএনপির নাম ভাঙ্গানো পোস্টার  নেতা মো: জিয়াউল হকের নেতৃত্বে তার ভাগিনা সিকিউরিটি ইনচার্জ রিফাত এবং সিকিউরিটি বিপ্লব ৪ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা নেয় এবং ভূমিপল্লিতে ব্যবসা করতে চাইলে প্রতি মাসে তাদেরকে ১ হাজার ৫০০টাকা করে তাদের চাঁদা দিতে হবে বলে জানিয়ে যান।

চটপটি বিক্রেতা মো: লিমন জানান, তার কাছ থেকে জিয়াউল হক জুলাই বিপ্লবের পর থেকে প্রথম তিন মাস ৭৫০০টাকা এবং পরের তিন মাস ৪৫০০ টাকাসহ সর্বমোট ১২ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। 

গরুর মাংস বিক্রেতা মো: রফিকুল ইসলাম জানান, জিয়াউল হক তার কাছে প্রতি সপ্তাহে ৩/৪ কেজি গরুর মাংস নিতো, মাংসের টাকা চাইলে জিয়াউর হক দিতেন না, মাঝেমধ্যে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দিতেন। সে মাংসের বকেয়া টাকা চাওয়ায়, তাকে গত দুই-তিন মাস ধরে ভূমিপল্লিতে মাংস বিক্রয় বন্ধ করে দিয়ে, ভূমিপল্লী থেকে বের করে দেয় এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভুমিপল্লি আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করতেই দিচ্ছেন না।

ফুলগাছ বিক্রেতা মিশু জানান, জিয়াউল হক তার ভাগিনা সিকিউরিটি রিফাত এবং সিকিউরিটি বিপ্লবের মাধ্যমে তার কাছে অগ্রীম ৩ হাজার টাকাসহ প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকায় ফুলগাছ বিক্রি করতে দিবে না।

ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকায় কর্মরত সিকিউরিটিরা জানান, জিয়াউল হক সাহেব তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। তারপর তার ভাগিনা সিকিউরিটি রিফাত ও সিকিরিটি বিপ্লবের মাধ্যমে ছয় জনকে বলে চাকুরি স্থায়ীকরণের জন্য জন প্রতি ৫,০০০ করে সর্বমোট ৩০,০০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে জানান।

ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকার সকল বৈধ ও অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জিয়াউল হকের নেতৃত্বে চলে। বছরে দুই একবার নাম ওয়াস্তে ড্রেন পরিষ্কার, বছরে দুই একবার নামকা ওয়াস্তে রাস্তা মেরামত, বছরে দুই একবার নামকা ওয়াস্তে মশার ঔষধ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকাসহ, দুধবিক্রেতা, সবজিবিক্রেতা, গাছবিক্রেতা, মধুবিক্রেতাদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করেন।  

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জিয়াউল হক বলেন, এটা নিয়ে মিটিং চলমান রয়েছে। ভূমি পল্লী এলাকায় সেবা নিশ্চিত করণে আমি একটা দায়িত্ব পেয়েছিলাম। আমি কারো কাছে টাকা চাই না। আর টাকা চাওয়ার আমার কোনো এখতিয়ার নেই। ভূমি পল্লী একটি সমিতি।

আমি কোনো অনিয়মের মধ্যে জড়িত থাকলে তা সমিতির ব্যাপার, আমার না। কারণ আমি যদি কোনো অনিয়ম থাকে তাহলে ওই সমিতি আমাকে নোটিশ করবে। কিন্তু তারা এখনো পর্যন্ত আমাকে কোনো নোটিশ করে নাই। আর আমি বিএনপির রাজনীতি করি।

পল্টন থানা পূর্বের কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলাম। তাই আমি কিভাবে দলের নাম ভাঙ্গাবো। মূলত আমার কাজের কারণে কয়েকজনের স্বার্থের উপর আঘাত এসেছে। তাই তারা এখন আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করছে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ব এনপ র ন ম ভ ঙ গ য় মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের পতাকা বুকে নিয়ে কানাডার লিগে শমিত

বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ করেই কানাডা ফিরে গেছেন শমিত শোম। জাতীয় দলের দায়িত্ব শেষ করে এবার ব্যস্ত ক্লাব ফুটবলে। গতকাল রাতেই তিনি মাঠে নেমেছেন নিজের ক্লাব ক্যাভালরি এফসির হয়ে।

ক্যাভালরি এফসি তাদের সামাজিক মাধ্যমে ১১ জন খেলোয়াড়ের একটি ছবি পোস্ট করেছে। সেখানে শমিতকে দেখা গেছে বাংলাদেশের পতাকাসহ জার্সিতে। ছবির ক্যাপশনে ১০টি দেশের পতাকার ইমোজি দেওয়া হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশের পতাকা ছাড়াও আছে যুক্তরাজ্য (দুইবার), সোমালিয়া, জার্মানি, জ্যামাইকা, পোল্যান্ড, ইতালি, কলম্বিয়া, নিউজিল্যান্ড ও বেলজিয়ামের পতাকা। একই ছবি পোস্ট করা হয়েছে ক্লাবটির অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডল ও ফেসবুক পেজে।

পোস্টে শমিতকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেক ভক্ত। কেউ লিখেছেন, ‘আমাদের বাঘ শমিত শোম।’ মন্তব্যের ঘরে বেশিরভাগই বাংলাদেশি ভক্তদের। 

গত রাতে ওয়ান্ডারার গ্রাউন্ডসে অনুষ্ঠিত কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ক্যাভালরি এফসি ১-১ গোলে ড্র করেছে ওয়ান্ডারার্স এফসির সঙ্গে। ক্যাভালরির হয়ে গোল করেন ক্যানিগিয়া এলভা, আর ওয়ান্ডারার্সের পক্ষে স্কোর করেন তিয়াগো কোয়েম্বরা। এই ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন শমিত, খেলেছেন ৬৮ মিনিট। ১০ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে এখন লিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে ক্যাভালরি। সমান ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আতলেতিকো।

এর আগে ১০ জুন ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে শমিত সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সতীর্থ, কোচিং স্টাফ, বাফুফে ও সমর্থকদের প্রতি।

বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের পরবর্তী দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবরে। ৯ অক্টোবর হংকংকে আতিথেয়তা দেবে বাংলাদেশ, এরপর ১৪ অক্টোবর তারা খেলবে হংকংয়ের মাঠে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ