বরিশাল কি পারবে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিততে, নাকি চিটাগাং কিংস ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবে? ফাইনালের আগে দুই দলের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে চলছে নানান বিশ্লেষণ। ২০ ওভারের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, আর তাই শিরোপা লড়াইয়ে কিছু ক্রিকেটার থাকবেন বিশেষ নজরে। হোম অব ক্রিকেট থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের দোকান, সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বিপিএল ট্রফি। ট্রফি উঠবে বরিশালের লঞ্চে, নাকি চট্টগ্রামের বন্দরে?
দেড় মাসের টুর্নামেন্টজুড়ে ছিল নানা বিতর্ক, তবে এখন সবার নজর শুধু ফাইনালে। মুখোমুখি লড়াই ও তারকাসমৃদ্ধ স্কোয়াডের দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, বরিশালকে হারানোর জন্য চিটাগাং কিংস দারুণ প্রস্তুত।
গ্রুপ পর্ব, কোয়ালিফায়ার, সব মিলিয়ে এবার তিনবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে বরিশাল। আর এই জয়ের পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল ডেভিড মালানের। বিপিএলে চিটাগাং কিংসের বিপক্ষে দারুণ ফর্মে থাকেন এই ইংলিশ ব্যাটার। ব্যাটিং গড় ৫০-এর ওপরে, ১৫৭.
নতুন সংযোজন হিসেবে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারেন জিমি নিশাম। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ফাইনালে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আর প্রথম কোয়ালিফায়ারে দুর্দান্ত পারফর্ম করা পেসার মোহাম্মদ আলীকে সামলানোও কঠিন হবে চিটাগাংয়ের জন্য।
এছাড়াও বরিশালের আরেক শক্তি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বড় ম্যাচে ভালো করার সুনাম আছে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের। চিটগংয়ের বিপক্ষে তার খেলা সর্বশেষ ম্যাচে ২৬ বলে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ফাইনালে তার কাছ থেকে এমন ইনিংসের আশায় থাকবে বরিশাল। ফাইনালে বরিশালের বাজির ঘোড়া হতে পারেন ক্যারিবিয়ান পেস অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্স। ৬ ম্যাচে ৫ ইনিংসে ১৮১.১১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৬৩ রান। বল হাতে ৬ ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
এছাড়াও তুরুপের তাস হতে পারেন তাওহিদ হৃদয়। তামিম ও মালানের পর এবার বিপিএলে বরিশালের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে কোয়ালিফায়ারের পারফরম্যান্সের হৃদয় ফাইনালেও টেনে আনলে চিটাগং বিপদে পড়তেই পারে।
কিংসদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন শামীম পাটোয়ারি। পুরো বিপিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই মিডল অর্ডার ব্যাটার ফাইনালেও রাখতে পারেন বড় ভূমিকা। এবার বিপিএলে সর্বোচ্চ ১০ রান সংগ্রাহকের মধ্যে সেরা স্ট্রাইক রেট শামীম হোসেনের।
বোলিংয়ে বড় ভরসা লঙ্কান পেসার বিনুরা ফার্নান্দো। বরিশালের বিপক্ষে আগের তিন ম্যাচেই তার ইকোনমি রেট ছিল দুর্দান্ত। পুরো টুর্নামেন্টের সবচেয়ে কম খরুচে বোলারদের একজন তিনি। তবে ফাইনালে বিশেষ নজর থাকবে খালেদ আহমেদের দিকেও। এবারের বিপিএলে ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছেন তিনি। ফাইনালে পাঁচ উইকেট পেলেই ছুঁয়ে ফেলবেন তাসকিন আহমেদের রেকর্ড। ১৩ ইনিংসে ২০ উইকেট নেওয়া খালেদের ইকোনমি ৮.৫৮।
তবে দুশ্চিন্তার খবর হলো, চিটাগাংকে ফাইনালে তোলার অন্যতম নায়ক আলিস আল ইসলামের খেলা এখনো অনিশ্চিত। তার অনুপস্থিতি চিটাগাংয়ের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। চিটাগং কিংসের এই স্পিনার এবার বিপিএলে তার দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ১৩ ইনিংসে ৬.৩২ ইকোনমি রেটে ১৫ উইকেট নিয়েছেন আলিস।
বরিশালের ব্যাটিং লাইনআপ তুলনামূলক শক্তিশালী হলেও, চিটাগাংয়ের মূল ভরসা তাদের মিডল অর্ডার। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল পারফরম্যান্সই নির্ধারণ করবে, বিপিএল ট্রফি এবার কার ঘরে যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল প রফরম য ন স র ব প এল র জন য উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।