রান উৎসবের ফাইনালে বরিশালের টানা দ্বিতীয় শিরোপা
Published: 7th, February 2025 GMT
পারফেক্ট ফাইনাল! শের-ই-বাংলার বাইশ গজে রান উৎসব। কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি। পরতে পরতে উত্তেজনা। যেদিকে চোখ যায় শুধু লাল আর লাল। সঙ্গে স্লোগান বরিশাল-বরিশাল! হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত চিটাগং কিংসকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ট্রফি ঘরে তুলেছে ফরচুন বরিশাল।
তারায় ভরা বরিশালের শেষের নায়ক দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা রিশাদ। ১২ বলে প্রয়োজন যখন ২০, তখন এক ছক্কায় ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন। শেষ ওভারের প্রথম বলে আরেক ছক্কায় চিটাগংয়ের স্বপ্ন মাটি করে দেন। ৩ বলে যখন ১ প্রয়োজন তখন ওয়াইড দিয়ে জয় নিশ্চিত করে দেন চিটাগংয়ের বোলার হুসেইন তালাত! রিশাদ ৬ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বরিশাল। ব্যাটিং করতে নেমে ৩ উইকেটে ১৯৪ রান করে চিটাগং কিংস। তাড়া করতে নেমে বরিশাল ৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জিতে যায়।
আরো পড়ুন:
বিপিএল ফাইনাল
বরিশাল ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন
জাল টিকিটে সয়লাব মিরপুর, চারগুণ দাম দিয়েও প্রতারিত দর্শকরা
জিততে হলে ওভার প্রতি রান প্রয়োজন প্রায় ১০। প্রয়োজন পরিস্থিতি বুঝে জ্বলে ওঠে তামিমের ব্যাট। অন্যপ্রান্তে দারুণ সঙ্গ দেন তাওহীদ হৃদয়। দুজনের জুটি থেকে ৪৯ বলে আসে ৭৬ রান। তাতে তামিমের অবদান ৫৪!
আরাফাত সানিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ২৪ বলে ফিফটি করেন বরিশালের অধিনায়ক। এর আগের ফাইনালেও তামিম ফিফটি হাঁকান। তার ইনিংস সাজানো ছিল ৯টি চার ও ১টি ছয়ে।
তামিম আউট হওয়ার পর ক্রিজে এসেই দ্বিতীয় বলে ফেরেন ডেবিড মালান। শরিফুলের গতিতে পরাস্ত হন এই ইংলিশ ব্যাটার। বল পায়ে লাগলেও জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিলে চিটাগংয়ের পক্ষে আসে।
এরপর কাইল মায়ার্স-হৃদয় জুটি গড়ে এগোতে থাকেন। সেট হয়ে হৃদয় যখন ব্যাট চালচ্ছিলেন তখন আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ২৮ বলে ৩২ রান করেন হৃদয়। মায়ার্সের সঙ্গী হন মুশফিক। ক্রিজে এসেই দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ৯ বলে ১৬ রান করে ফেরেন তিনি।
এক প্রান্তে উইকেট পড়লেও মায়ার্স বল-রানের পার্থ্যক্য কমিয়ে দেন। ২৮ বলে ৪৬ রান করেন এই ক্যারিবীয় ব্যাটার। শরিফুলের আঘাতে মায়ার্স ফিরলেও ততক্ষণে জয় যেন ছিল হাতের কাছে। কিন্তু একই ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফেরায় বিপকে পড়ে দলটি। ১১ বলে ৭ করেন মাহমুদুল্লাহ।
ক্রিজে মোহাম্মদ নবীর সঙ্গী হন রিশাদ হোসেন। ছক্কা হাঁকিয়ে এই লেগি বরিশালকে যেন বাঁচিয়ে তোলেন। সঙ্গে চিটাগংয়ের ফিল্ডারদের এলোমেলো ফিল্ডিং আরও সুবিধা পয় বরিশাল। ১৯তম ওভারে নবী ফিরলেও কোনো বিপদ হয়নি। চিটাগংয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন শরিফুল।
খাজা নাফে-পারভেজ হোসেন ইমনের ওপেনিং জুটি চিটাগংয়ের বড় রানের ভিত্তি গড়ে দেয়। দুজনের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ১২১ রান। ৭৬ বলে দুজনের জুটি থেকে এই রান আসে। খাজা নাফের আউটে ভাঙে জুটি। এই ব্যাটার ৩টি ছয় ও ৭টি চারের মারে ৪৪ বলে এই রান করেন নাফে।
পাকিস্তানি এই ব্যাটার আউট হলেও ইমনকে আউট করতে পারেনি বরিশালের বোলাররা। ৪৯ বলে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন তিনি। ৬টি চার ও ৪টি ছয়ের মারে এই রান করেন ইমন। এ ছাড়া ২৩ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন গ্রাহাম ক্লার্ক। ৩টি ছয় ও ২টি চারের মারে এই রান করেন তিনি।
ক্রিজের সেট ব্যাটার ইমন শেষ দিকে সুবিধা করতে পারেননি। এক প্রান্তে ইমন আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে উইকেটের মিছিলে চিটাগংয়ের রানের গতি কমে যায়। শেষ ওভারে মাত্র ৬ রান নিতে পারে। শেষ চার ওভারে দলটি মাত্র ৩১ রান নিতে পারে। এখানে পিছিয়ে যায় চিটাগং।
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল র ন কর ন এই র ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস