সচ্ছল বা মেধাবীরাই কেবল উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবেন, একসময় এমনটাই ভাবা হতো। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় থেকেই শিক্ষার্থীরা পছন্দের দেশে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরিকল্পনা নিচ্ছে তারা। বৃত্তি ও ফান্ডিংয়ের (তহবিল) সুযোগ বাড়ছে বলে স্নাতক পর্যায় থেকেই অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুরু করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেকে মাস্টার্স বা পিএইচডি করে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন।

দেশের শিক্ষার্থীরা এখন অনেক সচেতন। তাঁরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ ও শিক্ষার মানকে বেশ গুরুত্ব দেন, যাতে ভবিষ্যতে তাঁদের একাডেমিক ও পেশাগত দক্ষতা বাড়ে। অনেকেই বিদেশে ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ নিচ্ছেন।

করোনার কয়েক বছরে আদতে উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল কম। পরে কিছু কড়াকড়ি শিথিল হয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই পছন্দের দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ গ্রহণের জন্য বেশ পরিশ্রম করছেন। আবার বিশ্বের বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুনবিদেশে পড়তে চাই, কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রোগ্রাম আমার জন্য১৭ মিনিট আগে

বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সচরাচর ইংরেজিভাষী দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেন। তাই প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ায় অনেক শিক্ষার্থী পড়তে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সুযোগ বাড়ার কারণে সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে কানাডায় সম্প্রতি নিয়মকানুন কিছুটা কঠিন হয়ে যাওয়ার ফলে সংখ্যা কমছে। অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে সব সময়ই শিক্ষার্থীদের সুযোগ অনেক বেশি থাকে, তাই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যায় থাকে বেশি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সংখ্যার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল অষ্টম। তার আগের বছর বাংলাদেশ ছিল ১৩তম। যুক্তরাষ্ট্রে একেক সময় একেক ধারা দেখা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় বোঝাই যাচ্ছে যে নতুন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমনের পর কিছু পরিবর্তন আমরা দেখতে পাব। সাম্প্রতিক সময়ে যেমন কিছু বিধিনিষেধ চোখে পড়ছে।

ইংরেজিভাষী দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে অতটা জনপ্রিয় ছিল না। তবে গত কয়েক বছরে দেখছি, অনেক শিক্ষার্থী দেশটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইউরোপের অনেক দেশেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত হারে আমাদের শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন। বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, ইউরোপে পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানকার বেশ কিছু দেশে ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ আছে। তাই সেখানে যেতে তাঁরা আগ্রহী।

আরও পড়ুন২০২৫ সালের ১০ ফেলোশিপের খোঁজ১২ জানুয়ারি ২০২৫

পাশাপাশি বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। আপনি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন, কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে বিড়ম্বনায় পড়লেন। অনেক দেশের ক্ষেত্রেই এটা হতে পারে। যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে এসব সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা একসময় বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে পড়তে দেশের বাইরে যেতেন। অনেকেই এখন তথ্যপ্রযুক্তি–সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে পড়তে যাচ্ছেন। এসব বিষয়ে ফান্ডিং ও বৃত্তি লাভের সুযোগ বেশি বলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ও আগ্রহও বেশি। আবার অনেকেই ভবিষ্যতে বিদেশে স্থায়ীভাবে থাকতে ও নাগরিকত্ব লাভে আগ্রহী বলে তাঁরা বেশ কিছু নতুন বিষয়ে পড়তে পারেন। উদাহরণ হিসেবে নার্সিংয়ের মতো জনস্বাস্থ্য–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়ার কথা বলতে পারি। অনেক দেশেই এ ধরনের বিষয়ে পড়তে চাইলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ে, তেমনি ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান ও স্থায়ী আবাসের সুযোগ অনেকটাই উন্মুক্ত হয়।

যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যেতে চাচ্ছেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ থাকবে, ক্যারিয়ারসহ ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয়কে মাথায় রেখে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করুন। আপনার নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা রইল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ব ক সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া

ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।

অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।

এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।

দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।

২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • ইতিহাসের দ্রুততম মানবের এখন সিঁড়ি ভাঙতে দম ফুরিয়ে আসে
  • ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া