ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ১৬ বছরে জনপ্রশাসন থেকে অবসরে যাওয়া সাবেক ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

আজ রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সচিব ছাড়াও গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপসচিব পদে চারজনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সরকারি চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এ সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক অর্থসচিব এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খান। কমিটি ১০ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়।

কমিটির কাছে মোট ১ হাজার ৫৪০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদন ছিল। যাচাই-বাছাই করে কমিটি ৭৬৪ জনের ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করে।

ওই ৭৬৪ কর্মকর্তার মধ্যে কমিটি ৯ জনকে চার ধাপ, ৩৪ জনকে তিন ধাপ, ১২৬ জনকে দুই ধাপ ও ৫৯৫ জনকে এক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন দেওয়ার পর এখন প্রজ্ঞাপন জারি করল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা পদোন্নতির তারিখ থেকে প্রাপ্যতা অনুযায়ী সব আর্থিক সুবিধা পাবেন। তাঁরা তাঁদের বকেয়া বর্তমান অর্থবছরে ৫০ শতাংশ এবং বাকি ৫০ শতাংশ পরবর্তী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) পাবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ট র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন মুজিবুর রহমান

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের বরাইয়া গ্রামে জন্ম। সেই গ্রামেরই শিশুদের হাতে ধরে ছড়িয়েছেন শিক্ষার আলো। দীর্ঘ তিন দশকের শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসরে গেলেন বরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম মুজিবুর রহমান (৫৯)।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত হয় বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) এ টি এম কামরুল ইসলাম। এ সময় সাবেক সভাপতি, শিক্ষকবৃন্দ ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমানের নিষ্ঠা, সততা ও মানবিক অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার প্রদান করা হয়। পরে সুসজ্জিত গাড়িতে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দেওয়া হয় সম্মানজনক বিদায়।

মুজিবুর রহমান তার প্রাথমিক শিক্ষা বরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৯০ সালে একই বিষয়ে এমএসসি সম্পন্ন করেন। উচ্চ শিক্ষা শেষে তিনি সরকারি একাধিক চাকরির সুযোগ পেলেও তা গ্রহণ করেননি। কারণ, তার বাবার ইচ্ছা ছিল—শিক্ষক হয়েই জীবন শুরু এবং শেষ করতে হবে। বাবার সেই কথাকে আজীবন লালন করেছেন তিনি।

১৯৯৫ সালের ১২ জুন পুনসহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মুজিবুর রহমান। এরপর দেওতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর শিক্ষকতা শেষে ২০০৪ সালের ২৭ এপ্রিল নিজ গ্রাম বরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। টানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন শেষে সেখান থেকেই অবসরে গেলেন।

বিদায়ী শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, “আমি শিক্ষকতা পেশাকে কখনো চাকরি মনে করিনি। এটা ছিল আমার জীবনের ভালোবাসা ও দায়িত্ব। আজ বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু হৃদয়ে এই বিদ্যালয় চিরদিন অমলিন থাকবে।”

ঢাকা/রফিক/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টি-টোয়েন্টি থেকে উইলিয়ামসনের অবসরের ঘোষণা
  • ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন মুজিবুর রহমান