একটি বই একটি আন্দোলন: আবু সাঈদ খান
Published: 9th, February 2025 GMT
লেখক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেছেন, একটি বই একটি আন্দোলন। বই সমাজকে নতুন ভাবনা দেয়। যে জাতি বই পড়বে তারা সামনে এগোতে থাকবে। অন্যদিকে বই বিমুখ জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমাদের অনুষ্ঠানে, আনন্দে, প্রিয়জনকে বই দেওয়ার রীতি আবার শুরু করতে হবে।
রোববার অমর একুশে বইমেলার নবম দিনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ লেখক বলছি মঞ্চে দেশের সমাজ, সাহিত্য, শিল্প, রাজনীতি নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা আসাদ আহমেদ।
সাংবাদিক আবু সাঈদ খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার জন্ম ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের বিভাগদীতে। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-বিকল্প চিন্তা বিকল্প রাজনীতি, উপেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ উপেক্ষিত জনগণ, ভাষার লড়াই, মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর, রাজনীতির কালাকাল, স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি, প্রশ্নবিদ্ধ রাজনীতি ও সমকালীন সমাজ ইত্যাদি। তিনি বর্তমানে সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক।
আবু সাঈদ খান বলেন, বইমেলা আমাদের ঐতিহ্য। বইমেলা যেন কেবল উৎসব না হয়, এটি যেন বইয়ের উৎসব হয়। আমরা যেন বই কিনি এবং প্রয়োজনীয় বই কিনি। যে বই আমাদের চোখ-কান খুলে দেবে, আলোর দিশা দেবে—এ বই যেন কিনি।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, চব্বিশে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতা জোর করে ধরে রাখতে পারে না। হয়ত দুইবছর পারে পাঁচ বছর পারে কিংবা দশ-পনেরো বছর পারে। একসময় তাকে পরাজিত হতে হয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকেও পরাজিত হতে হয়েছে। জনগণই দেশের মালিক। জনগণই শক্তি। জনশক্তির কাছে স্বৈরশাসক পরাজিত হয়। এবার সেটা আবার প্রমাণিত হয়েছে।
চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন আবু সাঈদ খান। তিনি আরও বলেন, কিছু অনিয়ম-ব্যর্থতা আছে; সরকার সঠিক লক্ষ্যে এগোতে পারছে না। সরকারের কাছে মানুষের যে আশা ছিল সেটি পূরণ করতে পারছে না। এটার কারণ অনভিজ্ঞতা। দেশ পরিচালনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিন্তু অরাজনৈতিকরা সবসময় সফল হয় না। তবে এ সরকার আন্দোলনের ফসল। তারা গণতন্ত্রের যাত্রাটা নিশ্চিত করতে না পারলে সেটা জাতির ব্যর্থতা। তাই আশা বুকে রাখতে চাই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়