ছুটির দুই দিনের পর গতকাল রোববার অমর একুশে বইমেলায় লোকসমাগম ছিল কম। পরিবেশ ছিল বেশ নিরিবিলি। যাঁরা প্রকৃতই বই কিনতে মেলায় যান, তাঁদের জন্য এ রকম পরিবেশ ভালো। স্বস্তির সঙ্গে ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই খুঁজে নেওয়া যায়। কিন্তু বই কেনার মতো গ্রন্থানুরাগীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। সে কারণে মেলায় লোকসমাগম কম হলে বিক্রিও কমে যায়।
গতকাল সন্ধ্যায় অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সিরাজুল কবির চৌধুরী বললেন, তাঁদের স্টলে বিক্রি ভালো। কারণ, হুমায়ূন আহমদসহ জনপ্রিয় লেখকদের বই তাঁদের আছে। কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে লোকসমাগম কম হলে বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তিনি বললেন, এবার শুরুর দিন থেকেই মেলায় লোকজনের উপস্থিতি ভালো ছিল। তাঁরা এবারও বেশ কিছু তরুণ লেখকের সৃজনশীল বই এনেছেন। এসব তরুণ তাঁদের নিজস্ব পাঠকশ্রেণি গড়ে তুলতে পেরেছেন।
সন্ধ্যায় কবি ফরিদ কবির ও কথাশিল্পী নাসরীন জাহান ছিলেন অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে। ফরিদ কবির জানালেন, এবার এখান থেকে আসবে তাঁর প্রথম উপন্যাস নীল মাকখির চোখ। নাসরিন জাহান জানালেন, বিদ্যাপ্রকাশ থেকে এসেছে তাঁর গল্পগ্রন্থ বখতিয়ারের বানরগুলি। আর বেঙ্গল বুকস থেকে আসবে উপন্যাস পালকের চিহ্নগুলি। তাঁরা বললেন মেলার নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করা দরকার, তেমনি সব ধরনের মানুষ যেন নিরাপদে মেলায় আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৭টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে সুবর্ণ এনেছে বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াতের জীবনী রবি পথ, প্রথমা এনেছে শিবব্রত বর্মনের উপন্যাস শোধ, সাহিত্য কথা এনেছে ইতিহাসবিষয়ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা, মূল লেখক নাঈম হক, অনুবাদ নাদিরা মজুমদার। অন্যপ্রকাশ এনেছে আশরাফ কায়সারের কবিতা গাছ নেই ছায়া পড়ে আছে, অনন্যা এনেছে আনজীর লিটনের নির্বাচিত কিশোর গল্প-উপন্যাস, ঐতিহ্য এনেছে নাগিব মাহফুজের কায়রো ট্রিলজি: প্যালেস ওয়াক, প্যালেস অব ডিজায়ার, সুগার স্ট্রিট, অনুবাদ আনোয়ারা হোসেইন মঞ্জু; কথাপ্রকাশ এনেছে সুন্দরবন ও বনজীবী মানুষের জীবনালেখ্য নিয়ে সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমামের বনের মানুষ মানুষের বন, পাঞ্জেরী এনেছে তপন বাগচীর উপন্যাস শেষ দৃশ্যের আগে, আগামী এনেছে মুস্তফা মজিদ সম্পাদিত আদিবাসী সংস্কৃতি।
প্রথমার স্টলে গতকাল যেসব বই বেশি চলেছে, তার মধ্যে ছিল বদরুল আলম খানের সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন, বিরূপাক্ষ পালের বাংলাদেশের অর্থ খাত ও নীতি-অনীতির দ্বন্দ্ব, জহির রায়হানের অগ্রন্থিত গল্পগুচ্ছ: যখন যন্ত্রণা, অদ্বৈত মল্লবর্মণ অনূদিত আরভিং স্টোনের উপন্যাস জীবন-তৃষা।
গতকাল মেলার মূলমঞ্চে ছিল ‘মাকিদ হায়দারের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা। আতাহার খানের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চঞ্চল আশরাফ; আলোচনা করেন আসিফ হায়দার ও শাওন্তী হায়দার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।