ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের আয়কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুদানেও কর সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। 

আজ সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আয়কর আইন ২০২৩ এর ৭৬ ধারা উপ-ধারা (৩) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুবিধা দুটি বাতিল করা হয়। এতে সই করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খান।

গত বছরের নভেম্বরে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। আর গত ২৯ জানুয়ারি ধানমন্ডিতে ফাউন্ডেশনের কয়েকটি ঠিকানায় অভিযান চালায় দুদক। তবে এসব ঠিকানায় সূচনা ফাউন্ডেশনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানায় দুদক।

পুতুল বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। পুতুলের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হয়েছে। যার মধ্যে দুদক একটি মামলা দায়ের করেছে ‘তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পূর্বাচলে পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে।

দুদক বলছে, পুতুল সূচনা ফাউন্ডেশন নামের প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন নেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। পুতুল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে ফাউন্ডেশনের নামে পাওয়া অর্থ করমুক্ত করিয়ে নেন, যাতে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। সায়মা ওয়াজেদ এটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ছিলেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

উৎপাদনশীল শিল্পে অগ্রিম আয়কর কমছে

আসন্ন ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে উৎপাদনশীল খাতে অগ্রিম আয়কর কমানো হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নতুন বাজেটে অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হবে। মূলত শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উৎসাহিত করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে যারা পণ্য তৈরি করে (ফিনিশড প্রোডাক্ট) এমন সব প্রতিষ্ঠান এ সুবিধার আওতায় পড়বে। এর মধ্যে কৃষি, শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ (আইটি) সব খাত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

দেশে উৎপাদনশীল খাত বলতে মূলত পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশের উৎপাদনশীল খাতগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প, কৃষি এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই সঙ্গে কৃষি, শিল্প, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, চামড়া ও ওষুধসহ পরিষেবা এবং নির্মাণ খাতও রয়েছে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উৎপাদনশীল খাতে অগ্রিম আয়কর কমানো হলেও তাতে পণ্যের মূল্যে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে তা ব্যবসার ব্যয় ও অন্যান্য চাপ কমাতে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তে ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছুটা উপকার অবশ্যই হবে। ব্যবসায়ের ব্যয় বাড়ছে, তাই এটা স্বস্তিদায়ক হবে। কিন্তু বড়ভাবে বিনিয়োগ বা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি দেশের সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’

কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশের শিল্প খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও পরে তা আর ধরে রাখা যায়নি। গত কয়েক বছরে দেশের শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা ২০২৩–২৪ অর্থবছরে অর্ধেকের চেয়ে বেশি কমে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে আসে।

যদিও ২০২৪–২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশে উঠবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর আগে ২০২০–২১ অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরবর্তী ২০২১–২২ অর্থবছরে তা কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা অবশ্য সরকারের অগ্রিম আয়কর হ্রাসের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও সার্বিক কর কাঠামো কেমন হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। আমাদের উৎসাহিত করবে। তবে কর কমানোর হার খুবই কম। তাই সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না। আবার সার্বিক কর কাঠামো কেমন হবে, সেটাও দেখতে হবে।’

দেশের অগ্রিম কর আদায়ের ইতিহাস বেশ পুরেনো। ব্রিটিশ আমল থেকেই রাজস্ব আহরণে এ ধরনের কর আদায়ের চর্চা চলে আসছে। মূলত রাজস্ব আহরণের সহজ পদ্ধতি হিসেবে দেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে উৎসে কর হিসেবে বা ব্যবসার টার্নওভার বা লেনদেনের ওপর এ ধরনের কর ধার্য করা হয়। এটি মূলত কাঁচামাল ও পণ্যের আমদানির সময় প্রযোজ্য হয়, যা পরে বার্ষিক আয়কর রিটার্নে সমন্বয় করা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, লৌহ বা লৌহজাত পণ্য, সিমেন্ট, সুগন্ধি, কার্বনেটেড বেভারেজ, গুঁড়ো দুধ, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিক পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শিল্পোদ্যোক্তাদের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা পণ্যের বিপরীতে নেওয়া অগ্রিম আয়কর পরে সমন্বয় করা হয়। তবে সব খাতে এ সুবিধা দেওয়া হয় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লাভ হোক লোকসান হোক কর দিতেই হবে, হার আরও বাড়ল
  • নোবেলসহ দশটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের অর্থ করমুক্ত
  • মূল্যস্ফীতি কমানো, রাজস্ব বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ
  • উৎপাদনশীল শিল্পে অগ্রিম আয়কর কমছে
  • আয়করের ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন আসছে