সাগর-রুনি হত্যায় উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অনেকে জড়িত: শিশির মনির
Published: 11th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অনেকে জড়িত রয়েছে। তাদের নির্দেশে ১৩ বছর তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আশা করি, খুব শীঘ্রই হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শিশির মনির।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, গত ১৩ বছরে রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এ মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রিপোর্ট আগামী এপ্রিলের মধ্যে জমা দিতে।
শিশির মনির বলেন, ১৩ বছরে অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ হারিয়ে গেছে। তারপরও আমরা আশা করি, দ্রুত সময়ে তদন্ত কর্মকর্তারা রিপোর্ট দেবেন। এত বছর তদন্তে যারা বাধাগ্রস্ত করেছিল, র্যাবের হাতে যারা তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে মামলা আলামত ও বিচারকে আটকে রেখেছিল, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করা হবে। বর্তমান তদন্তের নির্দেশনা মোতাবেক বুঝতে পারছি, উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অনেকে এর সঙ্গে জড়িত ছিল।
শিশির মনির আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা আইনজীবী, পরিবার, সাইন্টিফিক ফরেনসিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেক তথ্য উপাত্ত এসেছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেকে জেলে আছে, তারা এ মামলা নিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে। অনেক ভিআইপি মুখ খুলছেন। তারা বলেছেন কীভাবে কে কে এ মামলার আলামত নষ্ট ও সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করেছে। উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মর্মে আমরা তথ্য পয়েছি। তদন্তের স্বার্থে নাম বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিবেদনে সব কিছুই বের হয়ে আসবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১১৫ বার। আগামী ২ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
সাগর-রুনি হত্যার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দ্রুত রহস্য উদঘাটনের এবং খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ, পরে ডিবি দুই মাস এবং সর্বশেষ ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে র্যাব প্রায় সাড়ে ১২ বছর তদন্ত করেও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এখনও অজানাই থেকে গেছে, তাদের খুনের কারণ এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ২৩ অক্টোবর পিবিআইপ্রধানকে নিয়ে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করারও নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এম জি
.
উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: শ শ র মন র পর য য় র তদন ত র র তদন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।