জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান পরিসংখ্যান ক্যাডারদের
Published: 11th, February 2025 GMT
এবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কমিশনের প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস পুনর্গঠনের প্রস্তাব করলেও পরিসংখ্যান ক্যাডারকে এর বাইরে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। এতে বলা হয় সার্ভিস পুনর্বিন্যাসে পরিসংখ্যান ক্যাডার ‘প্রযোজ্য নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারে সার্ভিসের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কমিশন তাঁদের প্রস্তাবে বিসিএস প্রশাসন, খাদ্য ও সমবায় ক্যাডার মিলে বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিস নাম রাখার প্রস্তাব করেছে। পররাষ্ট্র, পুলিশসহ অন্য ক্যাডারদের ক্ষেত্রেও আলাদা সার্ভিস নামের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান ক্যাডারের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কোনো সার্ভিসের কথা বলা হয়নি।
পরিসংখ্যান অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এই ক্যাডার নিয়ে সংস্কার কমিশনের মনোযোগের অভাব ছিল। এই ক্যাডারের গুরুত্ব আমলে নেওয়া হয়নি। বরং অবজ্ঞা করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবকে জনবিরোধী উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।
বিসিএস প্রশাসন ছাড়া ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত পরিষদের নেতারা বলেছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ ও বাকি ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ কোটা দিয়ে হাস্যকর ও অযৌক্তিক প্রস্তাব করেছে। এমন কোটা মানা হবে না ঘোষণা দিয়ে কমিশনের এই প্রস্তাব সংশোধন করে শতভাগ পদোন্নতি সব ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানায় পরিষদ।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন কেন দায়সারা ও অদূরদর্শী, তার যুক্তি তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবেদনের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশনে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কমিশন স্বাধীনভাবে জনবল নিয়োগ করতে পারবে বলা হয়।অন্যদিকে ১৮২-১৮৩ পৃষ্ঠায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘পরিসংখ্যান বিভাগ’কে বহাল রেখে প্রস্তাবিত পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বিভাগকে বহাল রেখে পরিসংখ্যান কমিশন করা মানে হচ্ছে, আমলাতন্ত্রের ছড়ি ঘোরানো। পরিসংখ্যান কমিশনে ক্যাডারের বাইরে থেকে বেসরকারি পর্যায় থেকে ঢালাও নিয়োগ হবে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়ে আজ পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংস্কার প্রস্তাবে ১৯৮০ সালে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ পেশাভিত্তিক এ ক্যাডার সার্ভিসকে ‘অস্তিত্বহীন’ করার মতো অদূরদর্শী সুপারিশ কর্মকর্তাদের বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে। সব বৈষম্য নিরসন ও গতিশীল জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার সঙ্গে এ সুপারিশ পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এ সুপারিশ করার আগে পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। এমনকি বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে লিখিত কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব কমিশনে পাঠালেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। বরং একতরফাভাবে এ ক্যাডারকে অস্তিত্বহীন করার মতো সুপারিশ করে দায়সারা প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স খ য ন ক য ড র ব স এস
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ