আগ্রাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুদ্ধের মূল কারণ। এটা কি সব সময় কোনো জাতির চিরলালিত সমন্বিত লালসা, ধর্ষকামের প্রতিফলন থেকে উৎসারিত, নাকি নিরাপত্তাহীনতার কথিত বয়ান সেখানে প্রাসঙ্গিক? যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা কি মানব সমাজের শাশ্বত প্রবৃত্তি? এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার লড়াই’ গ্রন্থে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হলেও এতে চলমান বিশ্বের ভূরাজনৈতিক নানা বিষয়ে লেখক বদরুল আলম খান তাঁর মত দিয়েছেন। উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বিশ্ব ইতিহাসের খণ্ডাংশ।

বইটিতে যুদ্ধের সূত্রপাতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। কীভাবে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠল ইউক্রেন এবং সেখানে কীভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটল, তার বিশ্লেষণ পাওয়া যায় এই বইয়ে। এতে এ যুদ্ধের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ভূকৌশলগত প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যাতেও আলোকপাত করা হয়েছে।    

বইটিতে সব মিলিয়ে রয়েছে আটটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় ‘বিভক্ত ইউক্রেন’-এ লেখক ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন। দেশটির পূর্বাঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার দিকে এবং পশ্চিমাঞ্চল কীভাবে ইউরোপের দিকে ঝুঁকে ছিল, তার বিবরণ রয়েছে। এ বিভাজনের অন্যতম কারণ ভাষা ও সংস্কৃতি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকার প্রধান ভাষা রুশ।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘যুদ্ধের পটভূমি’ উল্লেখ করে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে দায়ী করা হয়। তৃতীয় অধ্যায়ে ইউক্রেনের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ এসেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার ৯ দিন আগে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হয় দেশটি। চতুর্থ অধ্যায়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে জাতীয়তাবাদ। এ অধ্যায়ের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘দুই জাতীয়তাবাদের সংঘাত’। পঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘ফ্যাসিবাদী ক্যু ও মার্কিন ষড়যন্ত্র’। ২০১৪ সালে রাশিয়া কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ইউক্রেনে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে। ওই বছর থেকে পরবর্তী ১০ বছরের ঘটনা প্রবাহ এ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে।

বইটির ষষ্ঠ অধ্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার ছায়াযুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এ অধ্যায়ে লেখক দেখাতে চেষ্টা করেছেন, মার্কিন ষড়যন্ত্রের কারণে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। সপ্তম অধ্যায়ে যুদ্ধ শুরু এবং সেখানে ইউরোপ, ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াল, সে বর্ণনা আছে। অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা। এতে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের সাদ্দাম হোসেনের পতন প্রসঙ্গ।

বইটিতে লেখক কিছু ক্ষেত্রে ভ্রমণ কাহিনির আদলে বর্ণনা করে গেছেন, যা সহজ ও সুপাঠ্য। সেখানে রুশ ঐতিহ্যসহ নানা দিক ফুটে উঠেছে। ইতিহাস উঁকি দিয়েছে জীবন্ত হয়ে। ইউক্রেন ও বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্কের দিকও রয়েছে। বইটিতে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ণনার ভেতর দিয়ে ভূরাজনীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। এসেছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা সংকটের কথাও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ‘নিজের স্বার্থে’ একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং ডলারকে একমাত্র বৈশ্বিক বিনিময় মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, সে বিষয়ও রয়েছে। বইতে চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের উত্থানের প্রসঙ্গ এসেছে।

বদরুল আলম খান পড়াশোনা করেছেন রাশিয়ায়। এ কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ইতিহাস-সংস্কৃতি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তাঁর। বিশ্লেষণের ধরন অনেকটা রুশ বয়ান থেকে উৎকলিত। সে ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলেও রাশিয়াকে তেমন দোষারোপ করা হয়নি। স্বাধীন দেশে আগ্রাসনকারী রাশিয়াও যে আরেকটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, বইটি পাঠকালে অবশ্যই সেটা মাথায় রাখা জরুরি। সর্বোপরি বইটি থেকে পাঠক ভূরাজনীতির নানা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা পাবেন।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ: সত্য-মিথ্যার লড়াই ।। বদরুল আলম খান ।। প্রবন্ধ ।। প্রকাশক: বাতিঘর ।। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা ।। পৃষ্ঠা: ১৬৮ ।। মূল্য: ৪৫০ টাকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল র শ ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র প রসঙ গ র জন ত বইট ত

এছাড়াও পড়ুন:

কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

কারিগরি শিক্ষার্থীদের গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণাকে ‘সহিংস আন্দোলনের উসকানি ও গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ‘প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আলোচনায় বসে। দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারী—উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ডাকে। সবার যুক্তিতর্ক সমানভাবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়, যাতে কারও প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য না হয়।

লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আলোচনার টেবিলে সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আজ গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ডিপ্লোমাধারীদের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাই অবরোধ ডেকে সহিংস আন্দোলনের জন্য ক্রমাগত উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে কেন জনদুর্ভোগ করে অবরোধের উসকানি দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, এগুলো শুধুই বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা ও গভীর ষড়যন্ত্র, যা প্রথাগত আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আলোচনার টেবিল ছেড়ে যাঁরা অবরোধ করে দেশে নৈরাজ্য তৈরির উসকানি দিচ্ছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ও এজেন্ডা খতিয়ে দেখা দরকার।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য গায়ের জোর খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবরোধের প্রয়োজন নেই। যৌক্তিক দাবি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্রের অবসান হয়নি’
  • কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা