ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে ছিলেন ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছাত্র-জনতা গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড নারায়ণগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম মন্ডল ও ওসমানীয় আরেক দোসর  মতির সহযোগী আশরাফ উদ্দিনের সক্রিয় কর্মী।

কিন্তু ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এবার ভোল পাল্টিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত এসএম আসলামের হাত ধরে বিএনপির ব্যানারে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ খুঁজছে পুলিশ কনস্টেবল মফিজ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি  মোক্তার হোসেন নামের নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের এক আওয়ামী লীগের দোসর।

তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধীতা করাসহ রয়েছে নানা অভিযোগ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন মাস ছয়েক পূর্ণ হলেও এখনও তাদের দোসরমুক্ত করা যাচ্ছেনা সিদ্ধিরগঞ্জে। এখনও প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ওই সকল দোসরদের বিএনপির ব্যানারে দেখা মিলছে।

শুধু তাই নয়, তাদেরকে আগের মতই অনেকটা প্রভাব খাটাতেও দেখা যাচ্ছে। কোন কোন এলাকায় এখনও নিয়মিত চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্মের সাথেও জড়িত থাকছেন এসব নব্য বিএনপি নেতারা।  
গোদনাইল এসওরোডের তেল ডিপো কেন্দ্রীক বহু নিরীহ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, মারধর ও এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করা ছিলো মোক্তারের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার জীবনে নেমে আসতো প্রলয়। হামলা ও মামলার শিকার হয়ে তাকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হতো।  তার হাত থেকে ছাড় পায়নি পুলিশ কনস্টেবল মফিজও। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

কিন্তু বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ওসমানদের আমলে সিরাজ মন্ডল ও আশরাফের শেল্টারে মোক্তার এসব অপকর্ম করলেও তাদের পতনেও তিনি রয়ে গেছেন একই রকম।ওসমানদের পতনেও তার জীবনে একচুল পরিমান প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। কোন এক রহস্যজনক কারণে তিনি এখনও এলাকায় বহাল তবিয়তে থেকে তার অপকর্মগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে।

সূত্র বলছে, ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার সাথে সাথে ওসমানদের পতন হলে তিনি রাতারাতি খোলসপাল্টে চলে যান আসলামের শেল্টারে। বর্তমানে তিনি বিএনপি নেতাদের শেল্টারেই এলাকায় বহাল থেকে আগের মতই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সূত্রটির দাবি।

তবে এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যারা আসলে মোক্তারের মত ওসমানদের দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় বা শেল্টার দিচ্ছেন তারা মূলত বিএনপির কেউ না।

তারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে মোক্তার দের দিয়ে অপকর্ম করিয়ে এর থেকে একটা ভাগ নিচ্ছেন। আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। খুব শীঘ্রই মোক্তারদের সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মামুন মাহমুদ বলেন, 'বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে আওয়ামী লীগের যারা এখন বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করছে যারা করাচ্ছে দল তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে অনুরোধ রাখবো নিজ দলের ক্ষতি করবেন না কাউকে দলে অনুপ্রবেশ করিয়ে। ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের সাথে যদি কারও সম্পর্ক থেকে থাকে তা যদি প্রমাণিত হয় তার সদস্য পদ থাকবে না।'
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ ব এনপ র অপকর ম এল ক য় র পতন ওসম ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ

১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।

বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা

এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে  বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।

এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ: 

নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা

নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে  অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।

এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে  শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।

মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক

মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।

এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও  শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা। 


লেখক পরিচিতি:

মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • কেউ অপকর্ম করতে চাইলে সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন: মির্জা ফখরুল
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস