অস্বাভাবিক বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে কী করবেন
Published: 13th, February 2025 GMT
২০২৪ সালের নভেম্বর থেকেই ঢাকার বায়ুর মান ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। ডিসেম্বরেও একই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ বছরের জানুয়ারিতে বায়ুদূষণ আরও মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছায়, যা আগের বারের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর পরিবেশকল্যাণবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাটমসফেরিক পলিউশন স্টাডিজের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা প্রায় প্রতিদিনই বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দূষিত শহরের মধ্যে ছিল।
তবে এই পরিস্থিতেও বাইরে বের না হয়ে উপায় নেই। ব্যস্ত জীবনে কাজের সূত্রে বা কোনো প্রয়োজনে নিত্যদিন যদি আপনাকে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করতে হয়, কিছু আগাম সতর্কতা মানতে ভুলবেন না। বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ফুসফুসের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়োজিত সংস্থা আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় বাতলে দিয়েছে। জেনে নিন সেসব।
১.প্রতিদিনের বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেখুন
বাইরে বের হওয়ার আগে আপনার এলাকায় দৈনিক বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেখে নিন। আইকিউএয়ারের ওয়েবসাইট থেকে সহজে তা দেখে নিতে পারবেন। পূর্বাভাস আপনাকে জানিয়ে দেবে বাতাস কখন স্বাস্থ্যকর নয়। এ ছাড়া বায়ুর মান সম্পর্কে তথ্য পেতে পত্রিকা, রেডিও ও টিভির আবহাওয়া প্রতিবেদনেও চোখ রাখতে পারেন।
আরও পড়ুনমৌসুমি ফ্লু থেকে বাঁচতে কী করবেন০৪ অক্টোবর ২০২৪২. দূষণ বেশি থাকলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুনযখন বাতাসের মান অত্যধিক খারাপ থাকে, তখন বাইরে যাওয়া পারতপক্ষে এড়িয়ে চলুন। যদি জিমে যাওয়ার থাকে বা শপিং করার দরকার হয়, চেষ্টা করুন বাড়িতে বসে করা যায় কি না বা অনলাইনে কাজটি সারা যায় কি না। বিশেষ করে শিশুদেরও দূষিত বাতাসে বাইরে খেলাধুলা বা ঘুরতে দেওয়া থেকে বিরত রাখা উচিত। একান্ত যেতেই হলে মুখে মাস্ক পরুন।
৩. জ্বালানিচালিত যানবাহন ব্যবহার সীমিত করুননাগরিক হিসেবে যার যার জায়গা থেকে সচেতন থাকার চেষ্টা করুন। বায়ুদূষণ কমাতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তাই এ সময় যতটা সম্ভব গাড়ির ব্যবহার সীমিত করুন। গণপরিবহন, যেমন বাস, রেল, মেট্রোরেল ব্যবহার করুন।
৪. কাঠ বা আবর্জনা পোড়ানো এড়িয়ে চলুনজ্বালানির জন্য কাঠ বা আবর্জনা পোড়ানো অনেক অঞ্চলে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। শীতকালে আমাদের দেশে কাঠ পুড়িয়ে আগুন পোহানো হয়। এটি বাতাসে ক্ষতিকর কণার পরিমাণ বাড়ায়, যা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই যথাসম্ভব এটিও এড়িয়ে চলুন।
৫. ঘরের বাতাসের গুণগত মান নিশ্চিত করুনশুধু বাইরেই নয়, ঘরের ভেতরের বায়ুমানও সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে বিভিন্ন বায়ু পরিশোধনকারী ইনডোর প্ল্যান্ট রাখতে পারেন। যেমন স্নেক প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট ইত্যাদি।
৬. সর্বোপরি সচেতনতা বৃদ্ধি করুনদূষণ কমাতে ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই দায়িত্ব আছে। সরকারের সব স্তরের নীতিনির্ধারক যেন এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়, তার জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় এনে নিরাপদ পরিবেশ ও পরিষ্কার বাতাস নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র: আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন
আরও পড়ুনবেশি দিন বাঁচতে চাইলে এই পাঁচ খাবার থেকে দূরে থাকুন১৭ নভেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোট ফিরিয়ে এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চারজন। তাঁদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে এই আবেদন করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন হলে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং গণভোট বাদ দেওয়া সংক্রান্ত সেই সংবিধান আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিলও ঘোষণা করেন আদালত।
চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল দায়ের করলেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিলের কারণ ব্যাখ্যা করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। পুরো সংশোধনীর বাতিল চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু পুরোটা বাতিল করেননি। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করা হয়েছে। ‘যথাসময়ে’ এর শুনানি হবে।
শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনতে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও কিছু ধারা বাতিল করা প্রয়োজন ছিল। হাইকোর্ট রায়ে সেসব ধারা বাতিল করেননি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর সবগুলো বিধান সংবিধানে ফিরে আসেনি। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। ত্রুটিগুলোর বিষয়ে আদালতও বলেছেন। তারপরে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল না করে আংশিক বাতিল করেছেন। এতে করে সংবিধানে সংশোধনীর ব্যাপারে পদ্ধতিগত যে সুরক্ষা আছে, তা অকার্যকর হয়েছে। এসব কারণে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।’
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়। জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণ, ছাব্বিশে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
একই সঙ্গে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং আরেকজন ব্যক্তি আরেকটি রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এই দুটিসহ আইনের ৪৭ ধারা, ৭ক ও ৭খ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ৭ ধারা এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ১৮ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রায়ে গণভোটের বিধান সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।