রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধীদের দুটি কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
Published: 16th, February 2025 GMT
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী মহানগর ও জেলা কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নগরের তালাইমারী মোড়ে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।
এ সময় শহরে প্রবেশের প্রধান মুখের দুই পাশে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাস্তার দুই লেনের দুই পাশে একটি গাড়ি চলাচলে জায়গা করে দেওয়া হয়। অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি ছয় মাসের জন্য ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আল আশরারুল ইমামকে আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হজরত আনাসকে সদস্যসচিব করে ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থী মো.
এর পরদিন ঘোষিত কমিটিকে ‘পকেট’ কমিটি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার আবার বিক্ষোভ মিছিল করে কমিটি বাতিলের তিন দিনের আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে কমিটি বাতিল করা না হলে আজ তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সড়ক অবরোধের সময় রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল হাফিজ সরকার বলেন, ৩০ জানুয়ারি করা কমিটিতে ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগসহ সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগের দালালদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। এমন ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের এই আন্দোলনে সম্পৃক্ততাই ছিল না। এই সমন্বয়কদের পরিচয়েই গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি হয়েছে। সেই ভুয়া সমন্বয়কেরা এখন আবার বিভিন্ন পদের নেতা। এই আন্দোলনের সক্রিয় ব্যক্তিরা কেউই কমিটিতে নেই।
একই কলেজের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘এই কমিটির শেষ দেখা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব। রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা তাঁদের মনে রাখতে হবে। যদি এই কমিটিতে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের নেতারা জায়গা পান, তবে বিপ্লবী ছাত্র–জনতা তাঁদের ছেড়ে কথা বলবেন না। রক্ত এখনো রাজপথ থেকে শুকিয়ে যায়নি। যাঁরা টাকার বিনিময়ে কমিটি করেছেন, এই কমিটি অচিরেই বিলুপ্ত করতে হবে।’
আরও পড়ুন রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম বলেন, ‘অনতিবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করা না হলে রাজশাহীবাসী এর জবাব দেবে। আজকের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির কেউ যদি পরিচয় দিতে চান, তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হলে আমরা কিন্তু বসে থাকব না। আজকের মধ্যেই এই কমিটি বাতিল করতে হবে। আমরা মানুষের কোনো দুর্ভোগ চাই না।’
এ ব্যাপারে ৩১ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও রাজশাহী মহানগরের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। মহানগরের মুখপাত্র আঞ্জুমান আরা হক ও জেলার মুখপাত্র রোহানা হকের স্বাক্ষরে বলা হয়েছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটিকে বিতর্কিত করতে চাওয়া একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নানা চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। কোনোভাবেই এই ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। অনেক সহযোদ্ধার নাম এই কমিটিতে আসেনি। তাঁদের নাম দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা, বিশেষ সেল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বড় পদে রাখা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কম ট কল জ র কম ট ত অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।
কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!
দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।
কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।
আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।
এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।
একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।
বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান