রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী মহানগর ও জেলা কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নগরের তালাইমারী মোড়ে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।

এ সময় শহরে প্রবেশের প্রধান মুখের দুই পাশে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাস্তার দুই লেনের দুই পাশে একটি গাড়ি চলাচলে জায়গা করে দেওয়া হয়। অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি ছয় মাসের জন্য ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আল আশরারুল ইমামকে আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হজরত আনাসকে সদস্যসচিব করে ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থী মো.

রহমতুল্লাহকে সদস্যসচিব করে ১৪৮ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এর পরদিন ঘোষিত কমিটিকে ‘পকেট’ কমিটি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার আবার বিক্ষোভ মিছিল করে কমিটি বাতিলের তিন দিনের আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে কমিটি বাতিল করা না হলে আজ তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সড়ক অবরোধের সময় রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল হাফিজ সরকার বলেন, ৩০ জানুয়ারি করা কমিটিতে ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগসহ সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগের দালালদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। এমন ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের এই আন্দোলনে সম্পৃক্ততাই ছিল না। এই সমন্বয়কদের পরিচয়েই গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি হয়েছে। সেই ভুয়া সমন্বয়কেরা এখন আবার বিভিন্ন পদের নেতা। এই আন্দোলনের সক্রিয় ব্যক্তিরা কেউই কমিটিতে নেই।

একই কলেজের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘এই কমিটির শেষ দেখা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব। রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা তাঁদের মনে রাখতে হবে। যদি এই কমিটিতে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের নেতারা জায়গা পান, তবে বিপ্লবী ছাত্র–জনতা তাঁদের ছেড়ে কথা বলবেন না। রক্ত এখনো রাজপথ থেকে শুকিয়ে যায়নি। যাঁরা টাকার বিনিময়ে কমিটি করেছেন, এই কমিটি অচিরেই বিলুপ্ত করতে হবে।’

আরও পড়ুন রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম বলেন, ‘অনতিবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করা না হলে রাজশাহীবাসী এর জবাব দেবে। আজকের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির কেউ যদি পরিচয় দিতে চান, তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হলে আমরা কিন্তু বসে থাকব না। আজকের মধ্যেই এই কমিটি বাতিল করতে হবে। আমরা মানুষের কোনো দুর্ভোগ চাই না।’

এ ব্যাপারে ৩১ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও রাজশাহী মহানগরের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। মহানগরের মুখপাত্র আঞ্জুমান আরা হক ও জেলার মুখপাত্র রোহানা হকের স্বাক্ষরে বলা হয়েছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটিকে বিতর্কিত করতে চাওয়া একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নানা চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। কোনোভাবেই এই ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। অনেক সহযোদ্ধার নাম এই কমিটিতে আসেনি। তাঁদের নাম দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা, বিশেষ সেল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বড় পদে রাখা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কম ট কল জ র কম ট ত অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল

মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর)  বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।” 

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”

এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ঢাকা/চন্দন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ