‘মানুষের মুক্তির গান বারবার উঠে এসেছে তাঁর গলায়’
Published: 16th, February 2025 GMT
বাংলা ছিল তাঁর স্বপ্ন দেখার ভাষা। দ্রোহের ভাষা, ভালোবাসার ভাষা। সেই ভাষাতেই আজীবন খালি গলায় গান গেয়ে গেছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ‘বাংলা যে তার দৃপ্ত স্লোগান, ক্ষিপ্ত তীর ধনুক’। সেই বাংলাতেই ‘তৃপ্ত শেষ চুমুক’ দিয়ে গতকাল শনিবার ৮৩ বছর বয়সে বিদায় নিলেন বরেণ্য এ কণ্ঠশিল্পী। আপন সৃষ্টিকর্ম তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে। প্রিয় এই শিল্পীর প্রতি তারকাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
সৈয়দ আবদুল হাদী
‘বাংলার মায়াভরা পথে’ হাঁটা তাঁর শেষ হলো। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সরাসরি দেখা হয়নি। তাঁর গানের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। যন্ত্রসংগীতের সাহায্য ছাড়া খালি গলায় তিনি কী দারুণ গাইতেন। ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই’ গানটির কথা ও সুর অনেক পরিচিত হয়ে উঠেছে এবং তা কানে এলে অনেকটা যেন একটা দোলা অনুভব করা যায়। বিদায় প্রিয় প্রতুল মুখোপাধ্যায়। এ বাংলাতেই চিরকাল আপনাকে আমরা খুঁজে নেব!
খুরশীদ আলম
গান লিখেছেন, সুর দিয়েছেন। সবই বাংলায়। গণসংগীত নিয়ে থেকেছেন। কোনো বিশেষ ধরনে আবদ্ধ হয়ে থাকেননি। মাঝিমাল্লাদের থেকে যেমন ভাটিয়ালি শিখেছেন, তেমনই অনুপ্রেরণা নিয়েছেন বাংলা আধুনিক গান থেকেও। এমনকি জাপানি গান থেকেও শুষে নিয়েছেন গানের মূল্যবোধ। প্রতুল মুখোপাধ্যায় শেষ বয়স পর্যন্ত দৃপ্ত গলায় গেয়ে গেছেন বাংলা গান, বাংলার গান। তাঁর অনেক সৃষ্টির মধ্যে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি বিশেষভাবে সমাদৃত। বাংলার সংস্কৃতি যতদিন থাকবে ততদিনই বেঁচে থাকবে তাঁর গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’-এর মতো জনপ্রিয় গান।
তিমির নন্দী
সচরাচর কোনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন না প্রতুল মুখোপাধ্যায়। সেতারের সুর পছন্দ করতেন। পছন্দ করতেন স্পষ্ট ভাষায় কথা বলাও। বিকৃত উচ্চারণ পছন্দ করতেন না। তাঁর উচ্চারণের মতোই স্পষ্ট ছিল রাজনৈতিক বক্তব্যও। মানুষের মুক্তির গান বারবার উঠে এসেছে তাঁর গলায়। তাঁর প্রয়াণের মধ্যে দিয়ে বাংলা ও বাঙালিদের কাছে তৈরি হলো বিরাট শূন্যতা। তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কোনাল
বাংলা ভাষা নিয়ে লড়াইয়ের মাসেই আপনার প্রস্থান হলো শ্রদ্ধেয় প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তাঁর সৃষ্টি, ‘আমি বাংলায় গান গাই’ থেকে যাবে যত দিন বাংলা আছে, বাঙালি আছে। শ্রদ্ধেয় প্রতুল দা, গান আর নেওয়া হলো না আপনার কাছ থেকে। জীবন এ রকমই। আপনার এই স্থায়ী ঠিকানাটা শান্তির হোক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫