বান্দরবানে অপহৃত ২৬ শ্রমিক উদ্ধার হয়নি, যৌথ বাহিনীর অভিযান
Published: 17th, February 2025 GMT
বান্দরবানে অপহৃত ২৬ শ্রমিক উদ্ধার হয়নি, যৌথ বাহিনীর অভিযান
ইফতেখার, ২০০৭৭
সেকশন; -বাংলাদেশ
ট্যাগ:
ছবি: বান্দরবানের লামা। ফাইল ছবি
একসার্পট:
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর দুর্গম মুরুংঝিরি থেকে অপহৃত রবারবাগানের ২৬ শ্রমিককে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গতকাল রোববার সকালে তাঁদের অপহরণ করা হয়েছিল। রবারবাগানের মালিকেরা জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা আজ সকালেও মুক্তিপণ দাবি করেছেন। মুক্তিপণ না দিলে এসব শ্রমিককে হত্যা এবং রবারবাগান ধ্বংসের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রবারবাগানের মালিকেরা জানান, অপহরণকারীরা প্রত্যেক শ্রমিকের মুক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করেছেন। আজ সকাল পর্যন্ত মুক্তিপণ চেয়ে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। শ্রমিকদের মুঠোফোন নম্বর থেকেই কল করেছেন অপহরণকারীরা।
লামা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মুরুংঝিরি এলাকা। এলাকাটি লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলা সীমানার গহিন জঙ্গলে। সেখানে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় সহজে যোগাযোগ করা যায় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মংম্যাগ্য মারমা।
মুরুংঝিরি এলাকার একটি রবারবাগানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে মুরুংঝিরির পার্শ্ববর্তী রবারবাগানে চাঁদা দাবি করেছিলেন সন্ত্রাসীরা। বাগানের মালিকেরা চাঁদা দাবির বিষয়টি জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসীরা সবাই পাহাড়ি। তাঁরা এলাকায় চাঁদাবাজি করেন।
লামার সরই ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, একটি সশস্ত্র দল লামায় বেশ কিছুদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে। তারাই অপহরণের সঙ্গে যুক্ত। কিছুদিন আগে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্যাজুপাড়া বাজার এলাকা থেকে এই চক্রের এক সদস্যকে রিভলবারসহ আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেন। আটক ওই ব্যক্তি গত ১৫ জানুয়ারি সাতজন এবং এর আগে আরও তিনজন তামাকখেতের শ্রমিক অপহরণের কথা স্বীকার করেছেন।
জানতে চাইলে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সবাই পাহাড়ি। তাঁদের গ্রেপ্তার ও অপহৃত ২৬ জন শ্রমিককে উদ্ধার করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে অভিযান সফল হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন কর ছ ন অপহ ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।
গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।
সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।
তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।
বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।
পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।
সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।