তিন বছরেও নির্মিত হয়নি ভেঙে দেওয়া সেই শহীদ মিনার
Published: 17th, February 2025 GMT
২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতের আঁধারে ভেঙে দেওয়া একটি শহীদ মিনার এক মাসের মধ্যে তৈরি করে দেওয়ার সেই প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এই বাস্তবতায় এবারও ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুরে মহান শহীদ দিবস পালন করা হবে কাগজের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে। ভেঙে ফেলা শহীদ মিনার পুনঃস্থাপনের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সমকাল সুহৃদ সমাবেশের ঈশ্বরদী ইউনিট। গতকাল সোমবার বিকেলে সাঁড়াগোপালপুর স্কুল মাঠে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমকালের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি সেলিম সরদারের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন কলেজ শিক্ষক রাজিবুল আলম ইভান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা, শিক্ষক আরিফুল ইসলাম, মাসুম সিদ্দিকী, আলী হোসেন, জিহাদুল ইসলাম বাপ্পি, কামরুজ্জামান ফিরোজ, সুহৃদ হাসান চৌধুরী, দীপ্ত আল ফারাবী প্রমুখ।
তিন বছর আগে সাঁড়াগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করার অজুহাতে রাতের আঁধারে যে শহীদ মিনারটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিল তা এক মাসের মধ্যে তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় উপজেলা প্রকৌশল অফিস। কিন্তু এত বছর পরও সেখানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনারটি। এজন্য এবারও অস্থায়ী শহীদ মিনারে ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুরের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে অমর একুশের দিন শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে। প্রতিবছর এই শহীদ মিনারে উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্কুল পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও এলাকাবাসী শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে।
সাঁড়াগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান জানান, এখানে চমৎকার একটি শহীদ মিনার ছিল, এখন নেই। মনের কষ্ট বুকে চেপে কাগজের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে হবে এবারও– এটি আমাদের সবার জন্য দুঃখজনক।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষার্থী এবং এলাকার সাধারণ মানুষের আন্দোলন ও দাবির মুখে এক মাসের মধ্যে শহীদ মিনারটি আগের স্থানে নতুন করে নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এক মাস তো দূরের কথা গত তিন বছরেও ভেঙে দেওয়া সেই শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবীর বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য বলা হলেও ঠিকাদার তা এখনও করেনি। এই কাজের ঠিকাদার সৈকত ইসলাম বলেন, নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের প্রয়োজনে শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলতে হয়েছিল। আমি ওই শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য কথা দিয়েছিলাম কিন্তু সময়মতো তা করতে পারিনি। শিগগিরই শহীদ মিনারটি আমরা নির্মাণ করে দেব।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর এক ম স
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা