বইমেলায় ওই স্টল আর নেই, স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে বাংলা একাডেমি
Published: 17th, February 2025 GMT
অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুটি স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি ও তা বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় উত্তপ্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গতকাল রোববার মেলায় দুটি স্টল একবার বন্ধ করে দিয়ে আবার পণ্য বিতরণ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কখনো মব আশঙ্কা, কখনো নীতিমালাপরিপন্থীভাবে এগুলো বিক্রি, আবার কখনো দুঃখপ্রকাশের ঘোষণা আসে।
সব৴শেষ রোববার রাতে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রি–সংক্রান্ত একটা ইস্যু বহুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ফোনে বহুজন বাংলা একাডেমির কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ জানানো জরুরি বলে মনে করছে বাংলা একাডেমি।
একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রসার ও ব্যবহার সম্পর্কে বাংলা একাডেমির কোনো প্রকার সংকোচ থাকার প্রশ্নই আসে না। বইমেলার পণ্যায়নের একটা ব্যাপার স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তার প্রমাণ, একদিকে আমরা অন্য অনেকগুলো পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নিয়েছি। অন্যদিকে ইভেন্টকে বলেছি, সৌজন্য হিসেবে তারা যেন স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রয়োজনমাফিক বিতরণ করে।’ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওয়াশরুমের পাশে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা রাখবে, এটাও আমরা নিশ্চিত করছি।’
এই ঘোষণা আসার আগে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে। স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির কারণে গতকাল দুটি স্টল বন্ধ করে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর পক্ষে-বিপক্ষে বাড়তে থাকে আলোচনা। কেউ কেউ বলেন, এটি মব আশঙ্কায় বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত নিতে না পারার দুর্বলতা, আবার বইমেলায় অন্য পণ্য বিক্রি নিয়ে নীতিমালার ইস্যু সামনে আনেন কেউ কেউ। এর মধ্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন।
উপদেষ্টার পোস্ট
সংস্কৃতি উপদেষ্টা গতকাল রাত ১১টার দিকে নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন খুবই স্বাভাবিক একটা জিনিস। সরকার এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে উইমেন হেলথ হাইজিন নিয়ে সারা দেশে সচেতনতা তৈরি করেছে এবং করছে, সেখানে যেকোনো কারণেই হোক বইমেলায় এটাকে নিয়ে এই আলোচনাটা যে হইতে হলো এটা আমাদের জন্য বেদনার।’
একই পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, ‘এ বিষয়ে যেসব ভাই–বোনেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাঁদের সবার বক্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত। আপনাদের বিস্ময় ও ক্ষোভ আমাদেরও। যা–ই হোক, বাংলা একাডেমি একটু আগেই বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামীকাল (সোমবার) থেকে মেলা প্রাঙ্গণে মেয়েদের ওয়াশরুমের পাশে বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাপারেও তারা তাদের ব্যাখ্যা জানিয়েছে।’
উপদেষ্টার এই ফেসবুক পোস্টের দুই দিন আগে ঘটে এই বিতর্কের সূচনা।
যেভাবে শুরু
প্রাণ-আরএফএলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের প্রতিস্বাক্ষর থাকা একটি চিঠিতে আমাদেরকে “স্টে সেইফ” ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদর্শন না করার অনুরোধ জানানো হয়।’ চিঠিতে বলা হয়, ‘কিছু ব্যক্তির অভিযোগ, এসব গোপন পণ্য এবং প্রকাশ্যে দেখানো যাবে না। কারণ, এতে মানুষজনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’
প্রাণ-আরএফএলের ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি, চিঠিটি পাওয়ার পরে আমরা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাতে বইমেলায় স্টে সেইফের সার্ভিস এবং সেই সঙ্গে বুথগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিবৃতিতে প্রাণ-আরএফএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বইমেলায় আসা নারীদের জরুরি শারীরিক সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এটি তাদের বিনা মূল্যে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছিল। এ জন্য বাংলা একাডেমির তালিকাভুক্ত ‘ড্রিমার ডাংকি’ নামের একটি ভেন্ডরের কাছ থেকে বুথ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে নারীদের প্যাড দেওয়া হচ্ছিল।
তবে রোববার স্টল দুটি বন্ধের সময় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়, বইমেলায় অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির জন্য স্টল দুটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরা।
নারী ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের ব্র্যান্ড স্টে সেফের দুটি স্টল বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মেলার প্রথম থেকেই ছিল। স্টল দুটি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে বইমেলা কমিটির সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক সরকার আমিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বইমেলার নীতি অনুযায়ী মেলায় বই ও খাবার ছাড়া অন্য কিছু বিক্রির সুযোগ নেই। তাই স্টল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন বলে নয়, যেকোনো অনুমোদনহীন পণ্যের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।’
আজ বইমেলায় গিয়ে দেখা গেছে, স্টে সেফের ওই বুথ সেখানে নেই। আশপাশের স্টলের কর্মীরা জানান, ওই স্টল পূর্বাচলের ৩০০ ফুটে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলা একাডেমির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আজ থেকে নারী কর্মীদের দিয়ে বইমেলার ‘ওয়াশরুমের’ সামনে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখান থেকে বিনা মূল্যে নারীদের এই পণ্য সরবরাহ করা হবে। বইমেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ড ম র বইম ল য় উপদ ষ ট বইম ল র ব যবস থ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের
দীর্ঘ ২২ বছর পর আবার চাকা ঘুরতে যাচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের। এরই মধ্যে কারখানাটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে এক হাজার জনের। সরকারি মালিকানাধীন বস্ত্রকলটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) আবারও চালু করতে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। আজ সোমবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারখানাটি পরীক্ষামূলক চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিপিপিতে নেওয়ার পর রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের নাম বদলে রাখা হয়েছে বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এটি পুরোদমে চালু হলে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আজ দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএলের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল, গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টি লাইন ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান, গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান ও বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রাজশাহীতে অবস্থিত সরকারি এই টেক্সটাইল মিলটি ২২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এটি পিপিপিতে চালুর উদ্যোগ নেয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রায় ২৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাকে প্রাণ-আরএফএল উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারখানাটিতে তৈরি হবে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, জুতা ও তৈরি পোশাক। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটিতে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের অক্টোবরে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিসেম্বরে কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয় গ্রুপটি। এরপর তিন মাসের মাথায় কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটি পুরোদমে চালু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ঢাকাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে তারা উত্তরবঙ্গে এই বৃহৎ শিল্প প্রকল্প শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে রাজশাহীর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন এবং স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে।
আনিসুর রহমান বলেন, কারখানায় বর্তমানে সীমিত পরিসরে জুতা ও ব্যাগ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে রাজশাহীর প্রায় এক হাজার লোক কাজের সুযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এখানে একটি ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হবে।
রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে কারখানা চালু করার প্রক্রিয়ায় কয়েক শ গাছ ও পুকুর ভরাটের বিষয়ে রাজশাহীতে সমালোচনা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনও করেছে। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তাঁরা সঠিক উপায় অবলম্বন করেই এগুলো করেছেন। বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন। তার বিপরীতে তিন হাজার নতুন গাছ লাগানো হয়েছে।