বকশীগঞ্জে বিএনপির সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনা, কয়েক দিন ধরে চলছে পাল্টাপাল্টি মিছিল
Published: 18th, February 2025 GMT
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজকের এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা। সম্মেলন ঘিরে দলের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েক দিন থেকে সম্মেলন সফল ও প্রতিহত করতে পাল্টাপাল্টি মিছিল হচ্ছিল। সম্মেলন সফল করতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। অন্যদিকে সম্মেলন বন্ধের দাবিতে বিকেল চারটার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। সম্মেলন ঘিরে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ও সম্মেলনের স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কে হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক—এই নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা ও মিছিল-সমাবেশ হচ্ছিল। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বর্তমান ও সাবেক কমিটির নেতাদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। বিভক্তি দূর করতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ঢাকার বাসায় একাধিক বৈঠক হয়। কিন্তু উভয় পক্ষই কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। এর পর থেকে সম্মেলন সফল করতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের নেতৃত্বে প্রস্তুতি ও মিছিল-সমাবেশ হয়। অন্যদিকে সম্মেলন বন্ধের দাবিতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে মিছিল-সমাবেশ হয়। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি বিষয়ে ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মেলনের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ তালুকদার সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব সৃষ্টির মানেই সম্মেলন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সম্মেলনে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তাই আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মেলন চাই। সেই লক্ষ্যে আমাদের দাবি ছিল প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে। পরে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে তারপর উপজেলা ও পৌর সম্মেলন করতে হবে। আর ওই দাবিতে আমরা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছি। আর এই বিষয়গুলো জেলা, কেন্দ্র ও রশিদুজ্জামান মিল্লাতকে জানিয়েছি। সম্মেলন ঘিরে এই মুহূর্তে যদি একটি বিশৃঙ্খলা ঘটে, তাহলে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। আজকে অনেক বাধাবিপত্তির পরও নেতা-কর্মীদের শান্ত করেছি। আর আমাদের দাবিগুলো কেন্দ্রীয় নেতারা দেখবেন আশা করি।’
বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর বলেন, ‘সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি এখন শেষ হয়েছে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেছেন। সম্মেলন নিয়ে আর কোনো ষড়যন্ত্র চলবে না। দলের দুর্দিন যাদের পাশে পাওয়া যায়নি, তাঁরা আজ ত্যাগী সেজেছেন। সম্মেলন বানচাল করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছেন। নেতা-কর্মীরাই সম্মেলন সফল করবে। বিএনপির সম্মেলন প্রতিহত করার সাধ্য কারও নেই।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলন ঘিরে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের উত্তেজনা নেই। যে পক্ষটি দলে ঢোকার জন্য মিছিল করছিল, তাদের মধ্য থেকে দলের দুর্দিনে পাশা থাকা ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে আগেই করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে গত কয়েক দিন পাল্টাপাল্টি মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। তবে এখনো কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তারপরও সম্মেলন ঘিরে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তৎপর আছে পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া একটি টহল টিম সারাক্ষণ মাঠে কাজ করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স কর ম দ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা