জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজকের এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা। সম্মেলন ঘিরে দলের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েক দিন থেকে সম্মেলন সফল ও প্রতিহত করতে পাল্টাপাল্টি মিছিল হচ্ছিল। সম্মেলন সফল করতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। অন্যদিকে সম্মেলন বন্ধের দাবিতে বিকেল চারটার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। সম্মেলন ঘিরে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ও সম্মেলনের স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কে হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক—এই নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা ও মিছিল-সমাবেশ হচ্ছিল। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বর্তমান ও সাবেক কমিটির নেতাদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। বিভক্তি দূর করতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ঢাকার বাসায় একাধিক বৈঠক হয়। কিন্তু উভয় পক্ষই কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। এর পর থেকে সম্মেলন সফল করতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের নেতৃত্বে প্রস্তুতি ও মিছিল-সমাবেশ হয়। অন্যদিকে সম্মেলন বন্ধের দাবিতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে মিছিল-সমাবেশ হয়। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি বিষয়ে ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মেলনের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ তালুকদার সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব সৃষ্টির মানেই সম্মেলন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সম্মেলনে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তাই আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মেলন চাই। সেই লক্ষ্যে আমাদের দাবি ছিল প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে। পরে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে তারপর উপজেলা ও পৌর সম্মেলন করতে হবে। আর ওই দাবিতে আমরা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছি। আর এই বিষয়গুলো জেলা, কেন্দ্র ও রশিদুজ্জামান মিল্লাতকে জানিয়েছি। সম্মেলন ঘিরে এই মুহূর্তে যদি একটি বিশৃঙ্খলা ঘটে, তাহলে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। আজকে অনেক বাধাবিপত্তির পরও নেতা-কর্মীদের শান্ত করেছি। আর আমাদের দাবিগুলো কেন্দ্রীয় নেতারা দেখবেন আশা করি।’

বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর বলেন, ‘সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি এখন শেষ হয়েছে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেছেন। সম্মেলন নিয়ে আর কোনো ষড়যন্ত্র চলবে না। দলের দুর্দিন যাদের পাশে পাওয়া যায়নি, তাঁরা আজ ত্যাগী সেজেছেন। সম্মেলন বানচাল করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছেন। নেতা-কর্মীরাই সম্মেলন সফল করবে। বিএনপির সম্মেলন প্রতিহত করার সাধ্য কারও নেই।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলন ঘিরে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের উত্তেজনা নেই। যে পক্ষটি দলে ঢোকার জন্য মিছিল করছিল, তাদের মধ্য থেকে দলের দুর্দিনে পাশা থাকা ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে আগেই করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে গত কয়েক দিন পাল্টাপাল্টি মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। তবে এখনো কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তারপরও সম্মেলন ঘিরে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তৎপর আছে পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া একটি টহল টিম সারাক্ষণ মাঠে কাজ করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স কর ম দ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

২ উপদেষ্টার গড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ৩

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে অবৈধভাবে গতিরোধ করা, সরকারি কাজে বাধা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে রোববার রাতে গোয়ানঘাট থানায় ১৫০ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন থানার এসআই ওবায়েদ উল্লাহ। মামলার পর সোমবার ভোরে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন- মামলার ৬নং আসামি কালিনগরের দেলোয়ার হোসেন দুলু, মোহাম্মদপুরের শাহজাহান মিয়া ও ছৈলাখেল অষ্টম খন্ডের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ।

শনিবার সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তারা ফেরার পথে জাফলং পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে বিএনপির সংগঠনের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার আটকে নানান স্লোগানে বিক্ষোভ করা হয়। ঘটনার পর গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে বহিষ্কার ও জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি আজির উদ্দিনকে শোকজ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সমকালকে জানান, গতকাল রাতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সদ্য বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে। দ্বিতীয় আসামি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সোহেল আহমদ, ওমর ফারুক, সুমন শিকদার, দেলোয়ার হোসেন দুলু, আব্দুস সালাম ও আব্দুল জলিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ