‘খাঁটি গিনি, কিন্তু তাকে পরখ করবে কে তত্ত্বে দড়, কিন্তু কেউ তো প্রমাণ করার নেই– ব্যাকুল শ্বাসের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক হারিয়ে যাওয়া পথিক হারায় আপন পথের খেই।’ (জাভেদনামা– মুহাম্মদ ইকবাল, অনুবাদ: শঙ্খ ঘোষ) আহমদ ছফার মন বোঝার ক্ষমতা বাঙালি মুসলমানের নেই, সত্যি নেই। ব্যক্তিসম্পদে মোহাচ্ছন্ন নাগরিক সমাজ ও করপোরেট পৃথিবীতে পুঁজি বা সম্পদ-অর্জনের জন্য পাগলপারা মানুষ কী করে খাঁটি গিনি চিনতে পারবে? তাই যারা আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ নিয়ে সমালোচনায় সক্রিয়, তারা নিজেদের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া মানুষ। তাদের হৃদয় বলতে কিছু নেই। তাদের আছে ব্যক্তিগত অহম, লোভ, লালসা, আমি-আমি, আমার-আমার, এমন-তেমন এবং অজ্ঞতার অহংকার। আহমদ ছফা হৃদয়ের মানুষ– সত্য লুকানো পণ্ডিত তিনি ছিলেন না। তিনি ‘আমাদের’ শব্দটিকে আপন করে নিয়েছিলেন; সমষ্টির সম্ভাবনা, বাস্তবতা, স্বপ্নকে নিয়ে তাড়িত ছিলেন। ছফা মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছেন, জাতিকে নিয়ে ব্যাকুল হয়েছেন, নবীর মতো তিনি উম্মি উম্মি বলে বিলাপ করেছেন এবং কবির অনুভবে তা ভাষায় প্রকাশ করেছেন। ভাষার ভেতর দিয়ে চিন্তা করা কি এত সহজ! বাঙালি মুসলমানের জাতিগতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ও সংবেদন নিয়ে তাঁর মতো করে এর আগে কেউ ভাবেনি।

খাঁটি গিনি পরখ করার ক্ষমতা কতজনের থাকে! বাঙালি মুসলমানের সৌভাগ্য যে একজন সলিমুল্লাহ খান আছেন। তিনি খাঁটি গিনি কি পরখ করার ক্ষমতা রাখেন। ‘আ মরি আহমদ ছফা’, বিষয়: বাঙালি মুসলমানের মন– বইটি মধুপোক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা একুশে বইমেলা ২০২৫ আগামী প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটিতে তিনি আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ বইটি পরখ করে দেখেছেন; তত্ত্ব যে দড়, তিনি তা প্রমাণ করেছেন। ‘পৃথিবীতে মূল্যবোধের অজস্র ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠি হয়তো নেই, কিছু তো আছে। পুরোনো সমাজের একরকম মাপকাঠি, নবীন সমাজের অন্যরকম। সফল ও ব্যর্থ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও তা আলাদা আলাদা। দুই-হৃদয়বিশিষ্ট মানুষ এই বিশ্বের জন্য নয়। সেভাবে আমরা পাশাপাশি এই পৃথিবীতে থাকতে পারব না।’ (নোবেল ভাষণ, আলেক্সান্দার সলঝেনিৎ সিন, অনুবাদ– পরিমল ভট্টাচার্য)

লেখকের চিন্তা যদি সত্যিকারের চিন্তা হয়, খাঁটি হয়; তা তার সময়, জাতি, শ্রেণির নির্মম সমালোচনা করে টিকে থাকতে পারে। ‘আ মরি আহমদ ছফা’ বইয়ে বিশ্লেষণে এমন মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন সলিমুল্লাহ খান, বইটি পড়লে বাঙালি মুসলমানের সার্বিক চিন্তার পূর্ণাঙ্গ ধারণার কাছে পৌঁছানো যাবে। আহমদ ছফা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন বাঙালি মুসলমানের মনের অবস্থা ও গতি। ছফা মনের চিকিৎসক হিসেবে পথ্যও বাতলে দিতে চেয়েছেন। একজন চিকিৎসকের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার রোগীর রোগ ধরতে পারা। আহমদ ছফা বাঙালি মুসলমানের মনের রোগ ধরতে পেরেছিলেন এবং তিনি তাদের হৃদয়ের চিকিৎসক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিসম্পদলোভী, কোম্পানির মালিক, মুদি দোকানদার, মাছ ব্যবসায়ী, টাই-স্যুট পরা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজপড়ুয়া পেটি বুর্জোয়া নাগরিক, ডিপিএস জমাকারী বক-অভিভাবক, জমি দখলকারী অধ্যাপক, ল্যাংমারা বুদ্ধিজীবী, অসচেতন লেখক, ফাইল বগলে নিয়ে ঘোরা উকিল, স্যার স্যার করা আমলা, ঘোরগ্রস্ত কবি, হুজুগে জনতা– তারা কীভাবে সমষ্টির কল্যাণমুখী হৃদয় বিলিয়ে দেওয়া আহমদ ছফার জাতির প্রতি ভালোবাসাকে বুঝতে পারবে। যারা গ্রাম থেকে এসে শহর দেখে বেহুঁশ হয়ে পড়েছে। যারা একটা ফ্ল্যাট কেনার ধান্দায় সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। যারা নিজেদের পরিবারকে সেভ করার জন্য দেশকে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। এরা লোভ-লালসা, স্বার্থপরতা, পরিবার, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজন নিয়ে এত ব্যস্ত যে ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ বইটি না পড়ে সমালোচনা করে। এদের এই আচরণ দেখে ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার সেই কবে লিখে রেখে গেছেন ‘সারমেয় ও আতরদান’ নামে অমর কবিতা।

আ মরি আহমদ ছফা, সলিমুল্লাহ খান, মধুপোক, ৬৫০ টাকা

মনির ইউসুফ, কবি ও সম্পাদক, কবিতার রাজপথ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট, কী ব্যবসা করে তারা

চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানান।

ফেসবুক পোস্টে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, বাংলাদেশে এসেছে মার্কিন জায়ান্ট স্টারলিংক। আজ (সোমবার) তাদের লাইসেন্স আবেদন অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশে বিগ টেক জায়ান্ট আসার যাত্রাটা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরেই শুরু হলো। এভাবে আসবে আরও অনেকেই।

চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে একই পোস্টে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছেন, ‘আজ আমরা চায়নিজ জায়ান্ট টেনসেন্টের সঙ্গে অফিশিয়ালি বসেছি। তারাও বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের দ্রুততম সময়ে পলিসি সাপোর্টের আশ্বাস দিয়েছি।’

অসাইরিস গ্রুপও বাংলাদেশে আসছে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে হাইপার স্কেলার ক্লাউড ও ডেটা সেন্টার হবে বাংলাদেশি ডাটা ও ক্লাউড কোম্পানি যাত্রার হাত ধরে। এখানে হচ্ছে বিগ জায়ান্টদের জন্য বিশ্বমানের সিকিউরড ক্লাউড সে-আপ, যেখানে আসতে পারে মেটা, গুগলের পেলোড। এমন অভাবনীয় সব উপহার বাংলাদেশকে দিতে চলছেন অধ্যাপক ইউনূস।

টেনসেন্টের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় চীনের শেনজেনে অবস্থিত।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের গেমশিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী চীনের টেনসেন্ট২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
  • ।।  বাংলাদেশি কবিতা বিরল সম্মাননা ।।
  • সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
  • সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক 
  • জবির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ৮ বছর ধরে একই চেয়ারম্যান
  • ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের সাক্ষাৎ
  • বাংলাদেশে ১০ বছরের লাইসেন্স পেল স্টারলিংক
  • বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা ইন্টারনেট জায়ান্ট টেনসেন্ট
  • বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট
  • বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট, কী ব্যবসা করে তারা