খাঁটি গিনি, বাঙালি মুসলমানের ঘুরে দাঁড়ানোর সংবেদন
Published: 19th, February 2025 GMT
‘খাঁটি গিনি, কিন্তু তাকে পরখ করবে কে তত্ত্বে দড়, কিন্তু কেউ তো প্রমাণ করার নেই– ব্যাকুল শ্বাসের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক হারিয়ে যাওয়া পথিক হারায় আপন পথের খেই।’ (জাভেদনামা– মুহাম্মদ ইকবাল, অনুবাদ: শঙ্খ ঘোষ) আহমদ ছফার মন বোঝার ক্ষমতা বাঙালি মুসলমানের নেই, সত্যি নেই। ব্যক্তিসম্পদে মোহাচ্ছন্ন নাগরিক সমাজ ও করপোরেট পৃথিবীতে পুঁজি বা সম্পদ-অর্জনের জন্য পাগলপারা মানুষ কী করে খাঁটি গিনি চিনতে পারবে? তাই যারা আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ নিয়ে সমালোচনায় সক্রিয়, তারা নিজেদের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া মানুষ। তাদের হৃদয় বলতে কিছু নেই। তাদের আছে ব্যক্তিগত অহম, লোভ, লালসা, আমি-আমি, আমার-আমার, এমন-তেমন এবং অজ্ঞতার অহংকার। আহমদ ছফা হৃদয়ের মানুষ– সত্য লুকানো পণ্ডিত তিনি ছিলেন না। তিনি ‘আমাদের’ শব্দটিকে আপন করে নিয়েছিলেন; সমষ্টির সম্ভাবনা, বাস্তবতা, স্বপ্নকে নিয়ে তাড়িত ছিলেন। ছফা মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছেন, জাতিকে নিয়ে ব্যাকুল হয়েছেন, নবীর মতো তিনি উম্মি উম্মি বলে বিলাপ করেছেন এবং কবির অনুভবে তা ভাষায় প্রকাশ করেছেন। ভাষার ভেতর দিয়ে চিন্তা করা কি এত সহজ! বাঙালি মুসলমানের জাতিগতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ও সংবেদন নিয়ে তাঁর মতো করে এর আগে কেউ ভাবেনি।
খাঁটি গিনি পরখ করার ক্ষমতা কতজনের থাকে! বাঙালি মুসলমানের সৌভাগ্য যে একজন সলিমুল্লাহ খান আছেন। তিনি খাঁটি গিনি কি পরখ করার ক্ষমতা রাখেন। ‘আ মরি আহমদ ছফা’, বিষয়: বাঙালি মুসলমানের মন– বইটি মধুপোক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা একুশে বইমেলা ২০২৫ আগামী প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটিতে তিনি আহমদ ছফার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ বইটি পরখ করে দেখেছেন; তত্ত্ব যে দড়, তিনি তা প্রমাণ করেছেন। ‘পৃথিবীতে মূল্যবোধের অজস্র ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠি হয়তো নেই, কিছু তো আছে। পুরোনো সমাজের একরকম মাপকাঠি, নবীন সমাজের অন্যরকম। সফল ও ব্যর্থ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও তা আলাদা আলাদা। দুই-হৃদয়বিশিষ্ট মানুষ এই বিশ্বের জন্য নয়। সেভাবে আমরা পাশাপাশি এই পৃথিবীতে থাকতে পারব না।’ (নোবেল ভাষণ, আলেক্সান্দার সলঝেনিৎ সিন, অনুবাদ– পরিমল ভট্টাচার্য)
লেখকের চিন্তা যদি সত্যিকারের চিন্তা হয়, খাঁটি হয়; তা তার সময়, জাতি, শ্রেণির নির্মম সমালোচনা করে টিকে থাকতে পারে। ‘আ মরি আহমদ ছফা’ বইয়ে বিশ্লেষণে এমন মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন সলিমুল্লাহ খান, বইটি পড়লে বাঙালি মুসলমানের সার্বিক চিন্তার পূর্ণাঙ্গ ধারণার কাছে পৌঁছানো যাবে। আহমদ ছফা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন বাঙালি মুসলমানের মনের অবস্থা ও গতি। ছফা মনের চিকিৎসক হিসেবে পথ্যও বাতলে দিতে চেয়েছেন। একজন চিকিৎসকের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার রোগীর রোগ ধরতে পারা। আহমদ ছফা বাঙালি মুসলমানের মনের রোগ ধরতে পেরেছিলেন এবং তিনি তাদের হৃদয়ের চিকিৎসক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিসম্পদলোভী, কোম্পানির মালিক, মুদি দোকানদার, মাছ ব্যবসায়ী, টাই-স্যুট পরা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজপড়ুয়া পেটি বুর্জোয়া নাগরিক, ডিপিএস জমাকারী বক-অভিভাবক, জমি দখলকারী অধ্যাপক, ল্যাংমারা বুদ্ধিজীবী, অসচেতন লেখক, ফাইল বগলে নিয়ে ঘোরা উকিল, স্যার স্যার করা আমলা, ঘোরগ্রস্ত কবি, হুজুগে জনতা– তারা কীভাবে সমষ্টির কল্যাণমুখী হৃদয় বিলিয়ে দেওয়া আহমদ ছফার জাতির প্রতি ভালোবাসাকে বুঝতে পারবে। যারা গ্রাম থেকে এসে শহর দেখে বেহুঁশ হয়ে পড়েছে। যারা একটা ফ্ল্যাট কেনার ধান্দায় সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। যারা নিজেদের পরিবারকে সেভ করার জন্য দেশকে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। এরা লোভ-লালসা, স্বার্থপরতা, পরিবার, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজন নিয়ে এত ব্যস্ত যে ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ বইটি না পড়ে সমালোচনা করে। এদের এই আচরণ দেখে ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার সেই কবে লিখে রেখে গেছেন ‘সারমেয় ও আতরদান’ নামে অমর কবিতা।
আ মরি আহমদ ছফা, সলিমুল্লাহ খান, মধুপোক, ৬৫০ টাকা
মনির ইউসুফ, কবি ও সম্পাদক, কবিতার রাজপথ
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা
জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম।
শুক্রবার সকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি গ্যাসকূপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিলেটের যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হয় সেসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি? -এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিল্প কারখানা যেখানে গ্যাস পাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস দেওয়া অপচয়। নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুযোগ বন্ধ রাখা উচিত। তবে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করবে সরকার।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ গ্যাস কূপ থেকে থেকে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে গোলাপগঞ্জে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ এলাকা, বাপেক্সের রিগ বিজয়-১২ ও কৈলাশটিলা ১ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত রিগপ্যাড পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি একই উপজেলাধীন কৈলাশটিলা এমএসটি প্লান্ট পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (অপারেশন বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. খালিদ আহমেদ, বাপেক্স/এসজিএফএলের প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেব আহমদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেহসানুল ইসলাম, সেক্রেটারি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনির হোসেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম ফারুক আহমদ, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এমএসটি প্লান্টের ডিজিএম জাফর রায়হানসহ সংশ্লিষ্ট কূপের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।