রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বহিষ্কার
Published: 22nd, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা সংগঠক তানজিম আলম তাসিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সংগঠনের রংপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও সদস্য সচিব ডা. আশফাক আহমেদ জামিলকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ এবং মিডিয়া সেল থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে রংপুর জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠক রিফাত হাসান স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলার আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও সদস্য সচিব ডা.
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, স্পষ্টভাষী শত্রু নির্বাক মিত্র অপেক্ষা শ্রেয়। এর বাইরে আপাতত কিছু বলার নেই।
অন্যদিকে, সদস্য সচিব ডা. আশফাক আহমেদ জামিল বলেন, ঘরের শত্রু বিভীষণ। দেশ বিনির্মাণে যে দায়িত্ব আমানত হিসেবে নিয়েছি, তা জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো।
উল্লেখ্য, সারাদেশে সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তৃতির লক্ষ্যে রংপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ১৫৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। গত বছরের ২৪ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রংপুর জেলার আহ্বায়ক কমিটি ছয় মাসের জন্য অনুমোদন করা হয়।
এ কমিটিতে কারমাইকেল কলেজ শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদকে আহ্বায়ক এবং রংপুর মেডিকেল কলেজের ডা. আসফাক আহমেদকে সদস্য সচিব করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল