চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, শ্লীলতাহানি বলা যেতে পারে: এসপি
Published: 22nd, February 2025 GMT
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ডাকাতরা নারীদের টাচে গেছে। সেখান থেকে শ্লীলতাহানি পর্যন্ত বলা যেতে পারে।’
আজ শনিবার বেলা ১১টায় নিজ কার্যালয়ে বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এসপি মিজানুর রহমান বলেন, ‘১৮ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিট থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েল পরিবহনের বাসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত অবস্থায় ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি জানার পর পরই টাঙ্গাইলের পুলিশ সপার হিসেবে আমি আমার জেলা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি টিম নিয়ে কার্যক্রম শুরু করি। এই কার্যক্রমের ফলে আমরা তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল সেট, একটি ছুরি এবং নগদ ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। প্রাথমিকভাবে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তার আসামি মো.
এসপি বলেন, ‘আমরা বাসের যাত্রীদের খুঁজে বের করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কাজ করেছি। বাসে নারী যাত্রীদের ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা আমরা আমলে নিয়ে কাজ করছি। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার সময় নারীদের টাচে যেতে পারে এবং তা শ্লীলতাহানি পর্যন্ত যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলেনে বলা হয়, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ২টা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত রাজশাহীগামী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ২টার দিকের বাসযাত্রী ওমর আলী মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মির্জাপুর থানা পুলিশ ও টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভার মডেল থানায় অভিযান চালায়। অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মহিত (২৯),শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকা জেলার সাভার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টান গেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আহসান বলেন, গ্রেপ্তার সবুজ ও শরীফ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। অপরদিকে শহীদুর ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মহিতকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন থাকায় তাকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বাদী ওমর আলী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সোহাগ হোসেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ওঠেন। ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও ১০-১২ যাত্রীকে ওঠান চালক। রাত ১টার দিকে গাজীপুরের চন্দ্রা বাইপাস এলাকায় এসে চা-বিরতির জন্য বাসটি দাঁড় করানো হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর সেখান থেকে আরও তিন-চারজন নতুন যাত্রী উঠিয়ে বাসটি চলতে থাকে। দেড়টার দিকে গাজীপুর হাই-টেক সিটি পার্ক এলাকা অতিক্রমের সময় হঠাৎ ৮-৯ জন হাতে চাকু ও চাপাতি নিয়ে তাদের সিট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং চুপ থাকতে বলে।
এতে বলা হয়, কথা বললে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় ডাকাত দলের তিন সদস্য গিয়ে চালককে টেনেহিঁচড়ে সিট থেকে ফেলে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছয়-সাত ডাকাত চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোদের কাছে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে সব দিয়ে দে।’ ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসেট, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়। এ সময় দুই-তিন ডাকাত বাসে থাকা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। রাত আনুমানিক ৪টার দিকে ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকার মালপত্র ডাকাতি করে নন্দন পার্কের সামনে নেমে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনা জানার পর পুলিশ তাদের মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে যাত্রীরা মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে দেখা করে ডাকাতির বিষয়ে আবহিত করেন। পুলিশ অপেক্ষা করতে বললে কয়েক মিনিট পর চলে যান তারা। নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান যাত্রীরা। পুলিশ গিয়ে বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে আটক করে।
জানা গেছে, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বুধবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দেন।
বাদী ওমর আলী বলেন, ‘ডাকাতরা অনেক যাত্রীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। যার কাছে যা ছিল, সব নিয়েছে। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাসে ৪০ বছরের একজন ও ২০-২১ বছরের এক নারী ছিলেন। তাদের টেনেহিঁচড়ে সবকিছু নিয়েছে ডাকাতরা। এ ছাড়া তারা তাদের শরীরে হাত দিয়েছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি
এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’
আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।
আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।
ঢাকা/সৈকত/রাজীব