Samakal:
2025-09-18@06:10:21 GMT

যে ঋণ শোধ করা যায় না

Published: 23rd, February 2025 GMT

যে ঋণ শোধ করা যায় না

দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি প্রবন্ধ আছে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে। প্রবন্ধের শিরোনামটি ছিল, ‘যে ঋণ পরিশোধ না করাই ভালো।’ এ প্রবন্ধের প্রথমাংশে তিনি লিখেন, ‘ঋণ তো আছেই, থাকবেই। ক্ষুদ্র ঋণ যাদের তারা সেটা শোধ করেন, বড় ঋণীরা করতে চান না, কিন্তু সমষ্টিগতভাবে আমাদের অনেক ঋণ আছে। যেগুলো শোধ করা কখনোই সম্ভব নয় এবং যেগুলো আমাদের নত না করে ধনী করে। এমনি একটি ঋণ আমাদের কাজী নজরুল ইসলামের কাছে। এ ঋণ সাংস্কৃতিক।’


এমনই সাংস্কৃতিক ঋণের আবহে  দেশবাসীকে ঋণের প্রবাহে দোলাচ্ছে বাংলা ভাষাবাদীরা। এ ঋণও শোধ করা যাবে না। তা বরং বাড়লেই মঙ্গল। 
‘বাংলা ভাষা’ বিশ্বের ভাষাভাষীর মধ্যে চতুর্থ থেকে এখন পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে। ‘ম্যান্ডারিন’ হলো প্রথম, দ্বিতীয় অবস্থানে ইংরেজি, তৃতীয় অবস্থানে ‘স্প্যানিস’, চতুর্থ অবস্থানে আছে ‘হিন্দি’। ফলে সংখ্যা ও গুরুত্বের দিক দিয়ে বেশ তাৎপর্যময় ‘বাংলা’। 


 রাজনীতিতে কর্তৃত্ববাদ জায়গা পেলে তা কৃষ্টি-সংস্কৃতিতেও প্রভাব ফেলে। প্রাচীন বাংলায় বেগ পেতে হয়েছে সুনিপুণ নির্মাণকারীদের, যারা বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিয়েছেন। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বৈষ্ণব সহজিয়ারা মুখোমুখি হয়েছেন গৌড়ীয় গোস্বামীদের। বৈষ্ণব সহজিয়ারা এদের রোষানলে পড়েছেন বাংলায় লেখার কারণে। কৃষ্ণদাস কবিরাজ ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ বাংলায় লিখেছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর বইটি যমুনা নদীতে ফেলে দেন শ্রীজীব গোস্বামী। তারপরও সহজিয়া বৈষ্ণবরা বাংলায় সাহিত্য রচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। বাংলা ভাষায় লেখাকে এগিয়ে নিয়েছেন এ দেশের সুফিসাধক কবিরা। কিন্তু এখানেও বাদ সাধে গোঁড়া মুসলমান। তারা বাংলাকে হিন্দুয়ানি ভাষা হিসেবে দেখেছেন। গোড়া হিন্দু ও মুসলমানদের তোপের মুখে সবসময় বাংলা ভাষাকে থাকতে হয়েছে।

 

 এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত কবি কায়কোবাদের বক্তব্য তুলে ধরা যাক। কায়কোবাদ বলেন, ‘বঙ্গভাষা যে বঙ্গীয় মুসলমানদের মাতৃভাষা, এ-সমন্ধে বোধ হয় এখন আর দ্বিমত নাই। অন্তত অধিকাংশ বঙ্গীয় মুসলমানই এ কথা একবাক্যে স্বীকার করেন। অল্পসংখ্যক যাহারা করেন না, তাঁহারা এখনও উর্দুর স্বপ্নে বিভোর হইয়া আছেন। .

.. প্রকৃতির নিয়মকে উলটাইয়া দিয়া উর্দু কোন রূপেই বাংলার মুসলিম জনসাধারণের ভাষা হইতে পারে না।’
বাংলা ভাষার কোনো জাতিভেদ নেই। সব হিন্দু-মুসলমান মানুষের ভাষা বাংলা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা’ কেবল আমাদের মাতৃভাষা নয়, আমাদের জন্মভূমির ভাষা। ইহা হিন্দুরও ভাষা, মুসলমানেরও ভাষা। ইহার উপর হিন্দু-মুসলমানের তুল্য অধিকার।’


উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ তিনি ১৯৩২ সালের ২৫-২৬ ডিসেম্বর ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মিলন’-এ সভাপতির ভাষণে তুলে ধরেন। সম্মেলনের এ বক্তব্যটি আরও স্পষ্ট করে দেয়, ‘ ... যাহারা মুসলমানের জন্য এক প্রকারের বাংলা ভাষা এবং বাঙ্গালি হিন্দুর জন্য আর এক প্রকারের বাংলা ভাষার প্রচলন দেখিতে চান, আমি তাঁহাদের কেহ নহি। আমি বাংলার হিন্দু এবং বাংলার মুসলমানের জন্য এক মিলিত ভাষা চাই।’
অথচ ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর বাংলাকে রীতিমতো উপেক্ষা করা হয়েছে। অন্তত আরবির আদলেও যাতে বাংলা লেখা হয় সে  ষড়যন্ত্র হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় কাজে উর্দুকে চরম প্রাধান্য দিয়ে বাংলাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলার তরুণ-যুবারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, বাংলা ভাষাকে প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে।


এক ধরনের বকধার্মিকরা পহেলা বৈশাখকে ‘হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি  জাতিকে বিভক্ত করতে চেয়েছে। এখনও ওদেরই উত্তরসূরিরা পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে অপসংস্কৃতি বলে আখ্যা দেন। কোনো ধর্মীয় উৎসব সর্বজনীন হতে পারে না। কিন্তু বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস  এবং পহেলা বৈশাখের মতো উৎসব সর্বজনীন। সব পর্যায়ের মানুষ নির্বিঘ্নে ও অবলীলায় এ উৎসবে মজে যান এবং নিজস্বতা খুঁজে পান। 
পহেলা বৈশাখ, নবান্ন উৎসব বাঙালি জাতির লোকায়ত উৎসব। যেটাকে আমরা লোকজ বলে থাকি। প্রান্তিক মানুষের প্রাণ এখানে আছে বলেই এ উৎসব ‘লোকজ’ বলে ধরে নেওয়া হয়।  ধান কাটার মৌসুমে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। তখন মাড়াইকৃত ধান পেষণ করে চলে। এগুলো রূপান্তর করে পিঠা-পুলি, মুড়ি-মুড়কি, শিরনি ও পায়েস তৈরি করা হয়। এ নিয়ে আনন্দের সীমা-পরিসীমা থাকে না। বিভিন্ন ধর্ম অনুসারীরা যার যার মতো করে নবান্ন উৎসবে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকেন। তাই বলে এটা কোনো ধর্মীয় সংস্কৃতি নয়।


পহেলা বৈশাখ ঘিরে মানুষের মনন জগতে স্পন্দন তৈরি হয়। তাই পুরোনো ক্লেশ, হিংসা-বিদ্বেষ, দুঃখ-বেদনাকে বিদায় ও সুখ-সমৃদ্ধকে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং আগামী পথচলা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। অর্থাৎ এটা এক ধরনের সুখানুভূতি।
সুলতানি আমলে সোনারগাঁওয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের নেতৃত্বে ভাটিয়ালি, মারফতি, মরমি গানসহ উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে কবিতার আসরও বসত। কারণ সুলতান নিজেই একজন কবি ছিলেন। ওই সময় বিভিন্ন খানকায়ে লোকজ উৎসব জমে উঠতে। ওই সময় পীর-ফকিরদের বিভিন্ন খানকায় ও দরবার শরিফে ওরস অনুষ্ঠানকালে পালাগান ও কাওয়ালি আসর জমানো হতো।


লোকজ উপাদানের নিদর্শন হচ্ছে ‘মসলিন’। চতুর্দশ শতকে সোনারগাঁয়েও ‘মসলিন’ শিল্প বেশ সমৃদ্ধ ছিল। এ সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখতে শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদিন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আর্থিক অনুদানে সোনারগাঁয়ে গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’।
এখানে যুক্তগ্রাহ্য যে, কুটিরলিপি থেকে বাংলালিপির উদ্ভব হয়েছে বলে ভাষাবিদরা মনে করেছেন সেই দশম শতকে। কম্বোজরাজা ন্যায়পালদের ‘ইর্দার’ দানপত্রে এবং মহিপালদের ‘বানগড়’ দানপত্রের লিপিতে আদি বাংলা বর্ণমালা খচিত লেখা দেখা যায়। সে থেকেই বাংলা বর্ণমালার পথচলা শুরু। তাই বাংলার স্বকীয়তা খুবই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।


কবি শামসুর রাহমানের একটি গানের প্রথম স্তবক দিয়েই লেখার সমাপ্তি টেনে দিতে চাই, ‘স্মৃতি ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে, পানি টলটল মেঘনা নদীর কাছে, আমার অনেক ঋণ আছে, ঋণ আছে। কতজন, কতকিছুর কাছে যে আমাদের ঋণ তা হিসেব করা অসম্ভব। এ ঋণ আরও বাড়বে সন্দেহ নেই। তবে তা শোধ করা যায় না, শুধু স্বীকার করা যায়।’


জাহাঙ্গীর হোসেন: কবি ও প্রাবন্ধিক
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম সলম ন র অবস থ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • আজ থেকে বুসান উৎসব, নানাভাবে রয়েছে বাংলাদেশ
  • ‎সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব : ডিসি
  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড
  • ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
  • শেষ হলো সপ্তম যোসেফাইট ম্যাথ ম্যানিয়া ২০২৫