পছন্দের বিষয়ে কেন পড়তে চাই। তবে কি সবসময় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি কি সবসময় মিলে যায়। অনেক সময় হয়ে ওঠে না। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার স্বপ্ন থাকে সব পড়ুয়ারই। বয়সটা কম আর ইচ্ছা অনেক। স্বপ্নও আকাশছোঁয়া। তবে এর মধ্যেও থাকে নানা সমস্যা। উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছেন। সারাজীবন যে যোগ্যতা আপনাকে বিশ্বে পরিচয় করাতে জোরালো ভূমিকা রাখবে, সেই বিষয়ে খুবই সাবধানতার সঙ্গে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না, তো কেউ নিজের ভালো লাগার বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। আবার কোথাও থাকে মা-বাবার স্বপ্নভঙ্গের চাপ। তাই বলে কি থেমে যাবে স্বপ্নের ওড়ান, মোটেই নয়। এখান থেকেই শুরুটা করতে হবে নতুন করে। আবার অনেকেই পেয়ে যাই পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ। তাহলে তো আর কথাই নেই। পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে না পারার সমস্যাটা নতুন নয়। আবার ভালো লাগার বিষয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাটাও ভয়াবহ। যে ছেলেটি সারাজীবন ডাক্তার অথবা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নে মশগুল, তাকে যদি সাধারণ কোনো কোর্সে ভর্তি হতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তার পড়াশোনার ইচ্ছাটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যাই শেষ কথা নয়; তা থেকে উত্তরণের পথ তো খুঁজতে হবে নিজেদেরই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় কোন বিষয়ে পড়ব– এ নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এই ‘যুদ্ধের’ অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অনেকের মধ্যেই জন্ম নেয় হতাশা। শিক্ষার্থীর পছন্দ আর অভিভাবকের পছন্দ প্রায়ই এক হয় না। পছন্দের বিষয়ে সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রায়ই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে নিজেদের মেধার অপচয় করে। মনে রাখতে হবে প্রতিটি বিষয়েরই কোনো না কোনো বিশেষত্ব আছে, আছে নতুন করে জানা এবং তার সঠিক ও সময়োপযোগী বাস্তবায়নের সুযোগ। প্রশ্ন হলো, কোন বিষয়টা আপনাকে আলোড়িত করে, কোনটা আপনার ভেতরে আগ্রহ জাগায়। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ভাষা, শিল্পকলা, সাহিত্য, ব্যবসা– যাই হোক না কেন। ভালো লাগার সঙ্গে মিলিয়ে আপনি নিশ্চয়ই কোনো না কোনো বিষয়ের খোঁজ পাবেন। প্রথম কাজই হলো, আপনার অনুপ্রেরণার জায়গাটা খুঁজে বের করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করে না, বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় ক্ষেত্র। এখানে তারা সামাজিক আচরণ, যোগাযোগের ক্ষমতা, ভাষাগত দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা, দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পারা, উপস্থাপন করতে পারা এবং নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি ‘সফট স্কিল’ আয়ত্ত করার সুযোগ পায়। বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্য– যে বিভাগেই পড়ি না কেন, সফট স্কিল অর্জনের সঙ্গে আদতে পড়ার বিষয়ের খুব একটা সম্পর্ক নেই। ভবিষ্যতে সফল পেশাজীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দক্ষতাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে না পারলেও যেখান থেকে এই দক্ষতাগুলো ভালোভাবে অর্জন করা যাবে, বিষয় বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। আপনার সংক্ষিপ্ত তালিকায় যেসব বিষয়ের নাম আছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন, এ বিষয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় কী কী সুযোগ আছে? অনেক সময় এমন হয়, দেখবেন বাংলাদেশে একটা বিষয় নতুন। অথচ হার্ভার্ড, এমআইটি, অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওই বিষয়গুলো খুব গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হচ্ছে। বৈশ্বিক চিত্রটা দেখলে আপনি তুলনা করতে পারবেন। পরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতেও সহায়ক হবে। যে বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানো জরুরি। ইন্টারনেটে সেই নতুন বিষয় নিয়ে ভালো করে খোঁজ করলে নানা সুযোগ সামনে আসবে। ফলে বিষয়টি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা হবে। একই সঙ্গে তা নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ চোখের সামনে খুলে যাবে। সব ধাপ পেরিয়ে এসে এবার বিষয় নির্বাচন করুন। যখন আপনি আপনার গন্তব্য জেনে গেছেন, তখন আর পেছনে তাকানোর উপায় নেই। সমস্ত আবেগ, একাগ্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। নিজের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকুন এবং পছন্দের বিষয়ে সেরা হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। যদি উদ্ভাবন বা গবেষণায় আপনার ঝোঁক থাকে, তাহলে যেসব বিষয়ে সুযোগ আছে, যেমন জেনেটিকস ও বায়োটেকনোলজি, ফার্মাসি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন– এ বিষয়গুলো বেছে নিন। আবার তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ থাকলে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, ডেটা সায়েন্সের মতো বিষয়গুলো পড়তে পারেন। আপনি যদি কৌশল ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা অথবা বাজার বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে চান, তাহলে কৌশল ও নেতৃত্ব, মার্কেটিং কিংবা আন্তর্জাতিক ব্যবসা নিয়ে পড়ুন। রাজনীতি, সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তারা নির্দ্বিধায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, শিল্পকলা, ভাষা– এ ধরনের কোনো বিষয়ে ভর্তি হতে পারেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ষয়গ ল আপন র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।