রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের’ সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংগঠনটির বিভাগীয় সভাপতিসহ ছয় কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকালে পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের ছিদামবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে।

পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিযবুত তাওহীদের একটি কর্মসূচি হওয়ার কথা মঙ্গলবার। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিস্ট লোকজনও সম্ভবত এদের সঙ্গে আছে। আজকে কিছু লোকজনের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিল। সেখানে গ্রামবাসী বুঝতে পারেন, তাওহীদের লোকজন জড়ো হচ্ছে। তখন তাঁরা সেখানে গেলে হিযবুত তাওহীদের লোকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করি।’

ওসির ভাষ্য, দুই পক্ষকে সরিয়ে দিলে তখন আরেকটি পক্ষ আরেক গ্রাম থেকে এসে হিযবুত তাওহীদের লোকজন যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, পেছন থেকে সেই বাড়িতে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে চার-পাঁচটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হিযবুত তাওহীদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পান ছিদামবাজার এলাকার আবদুল কুদ্দুস। এ নিয়ে মঙ্গলবার তিনি বাড়িতে সংগঠনের নেতাদের দাওয়াত দেন। এ উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে স্থানীয় ডেকোরেটর থেকে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পারুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি নূর আলমের হুমকির কারণে ডেকোরেটরের মালিক জিনিসপত্র ফেরত নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে রাতেই জানতে পারেন, সোমবার তাঁর বাড়িতে হামলা হবে। তিনি রাতেই পীরগাছার ওসি ও উপজেলা জামায়াতের নেতাদের বিষয়টি জানান।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। প্রথম দফায় ছয়টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। তাঁর ভাষ্য, ‘হিযবুত তাওহীদের আস্তানা, খ্রিষ্টানের আস্তানা, ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও’ স্লোগান দিয়ে তাঁর ও কয়েকজন কর্মীর বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। সেখানে হিযবুত তাওহীদের ১০-১৫ জন কর্মী ছিলেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয়বার সংগঠিত হয়ে এসে হামলা করেন।

তবে ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের দাবি, ‘ওরা (হিযবুত তাওহীদ) সন্ত্রাসী। গন্ডগোল করার জন্য সবাই একখানে হইছে। লক্ষ লক্ষ জনতা থেকে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে, কেউ জানে না। আমি ওখানে যাইনি।’ নূর আলমের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের লোকজনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং জামায়াতের লোকজন প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। হামলার আশঙ্কার কথা আবদুল কুদ্দুস জানিয়েছিলেন কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি।

আগে থেকে কোনো পক্ষই বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি দাবি করে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম দাবি করেন, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তার আগেই যেটুকু হয়েছে, আশপাশে হয়েছে। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।

পীরগাছা থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধ কোনো অভিযোগ আাছে কি না, জানতে চাইলে নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন তাঁরা চিকিৎসাধীন।

তবে হিযবুত তাওহীদ নেতা আবদুল কুদ্দুস দাবি করেন, তাঁরা ভুক্তভোগী হলেও পুলিশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছয়জন ও তাঁর বাড়ি থেকে চারজনকে আটক করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ক দ দ স র ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ